‘নিউরাল ননজাস’–বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের প্রতিনিধিত্বকারী দলটি হংকং-চীনে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ডেটা সায়েন্স অলিম্পিয়াড-২০২৫-এ তৃতীয় স্থান অর্জন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তাদের উদ্ভাবনী প্রজেক্ট ‘আরবানোভা’ কেমন করে পেলো এই সাফল্য তাই তুলে ধরেছেন ইমাম হোসেন মানিক
একুশ শতকে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ‘ডেটা’। এই ডেটা কাজে লাগিয়ে আগামীর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার লড়াইয়ে হংকংয়ের মাটিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের তরুণ মেধাবীরা। বাঘা বাঘা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে ব্রোঞ্জপদক নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতিনিধিত্বকারী দল ‘নিউরাল নিনজাস’। বুয়েট ব্রেইন টিজার ক্লাবের সভাপতি অপূর্ব কুমারের নেতৃত্বে দল ‘নিউরাল নিনজাস’ হংকং, চীনে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ডেটা সায়েন্স অলিম্পিয়াড (আইডিএসওএল)-২০২৫-এ তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
৩০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তাদের উদ্ভাবনী প্রজেক্ট ‘আরবানোভা’, একটি এআইভিত্তিক শহুরে স্থায়িত্ব ও পরিবেশ বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম–আন্তর্জাতিক বিচারকদের বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছে। এই অর্জন শুধু বুয়েট নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। তরুণ উদ্ভাবকদের এমন সাফল্য প্রমাণ করে, বাংলাদেশও এখন প্রযুক্তি ও ডেটা সায়েন্সের বৈশ্বিক অগ্রযাত্রায় এক শক্তিশালী প্রতিযোগী।
‘নিউরাল নিনজাস’-এর এই বিজয় ভবিষ্যতের উদ্ভাবকদের জন্য অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। ডেটা সায়েন্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর ভবিষ্যতের দক্ষতা বিকাশে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক ডেটা সায়েন্স অলিম্পিয়াড-২০২৫।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী, গবেষক ও তরুণ উদ্ভাবকরা অংশ নেন এ প্রতিযোগিতায়, যার মূল উদ্দেশ্য বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে ডেটা সায়েন্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগকে উৎসাহিত করা। আন্তর্জাতিক এই অলিম্পিয়াডটি আয়োজন করে কনিগসবার্গার ব্রিজেস ইনস্টিটিউট (কেবিআই)। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান; যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি,প্রকৌশল ও গণিত তথা স্টেম, বিশেষত ডেটা সায়েন্স, এআই ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে।
আইডিএসওএল শুধু তাত্ত্বিক পরীক্ষা বা কোডিং প্রতিযোগিতা নয়; এটি এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের উদ্ভাবনী ডেটাচালিত সমাধান উপস্থাপন করেন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে। ২০২৫ সালের ২৯ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হংকংয়ের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয় আইডিএসওএলের মূল অনুষ্ঠানগুলো।
প্রতিযোগিতার কাঠামো
আইডিএসওএল ২০২৫ মূলত দুটি প্রযুক্তিগত ধারায় বিভক্ত ছিল: সল্যুশন আর্কিটেকচার (আর্ক)–ডেটা সায়েন্স সমাধানের কাঠামো, কৌশল ও পরিকল্পনা বিষয়ে কাজ। সল্যুশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইনজি)– বাস্তব কোডিং, প্রোটোটাইপ ও এআই সিস্টেমের উন্নয়নকেন্দ্রিক কাজ। অংশগ্রহণকারীরা দলগতভাবে (১-৬ জন) এসব প্রকল্প জমা দেন। প্রতিযোগিতার ধাপ ছিল প্রি-রেজিস্ট্রেশন, কোয়ালিফায়ার, প্রিলিমিনারি রাউন্ড ও চূড়ান্ত প্রদর্শনী।
অংশগ্রহণ ও যোগ্যতা
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় ও ওপেন বিভাগে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল বিশ্বের যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য। প্রতিযোগীরা তাদের জন্মভূমি, নাগরিকত্ব বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মনোনয়নের ভিত্তিতে দেশ প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছেন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
সেরা প্রকল্পগুলোকে দেওয়া হয়েছে গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ মেডেল, পাশাপাশি ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড, সাসটেইনেবিলিটি অ্যাওয়ার্ড, প্রাইভেসি অ্যাওয়ার্ড ও আপস্টার্ট অ্যাওয়ার্ড। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ট্রফি, সনদ ও নগদ অর্থ পুরস্কার; যার মাঝে বুয়েট ব্রেইন টিজার ক্লাবের সভাপতি অপূর্ব কুমারের নেতৃত্বে দল ‘নিউরাল নিনজাস’ তৃতীয় স্থান (ব্রোঞ্জপদক) অর্জন করেছে।
আয়োজকদের মতে, আইডিএসওএল ২০২৫-এর মূল লক্ষ্য হলো তরুণদের এমন ডেটাচালিত চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করা, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা শেখার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সহপাঠীদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার সুযোগ পান। এই আয়োজন তরুণদের জন্য শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং শেখা, উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের এক অনন্য সুযোগ। অংশগ্রহণকারীরা এখানে বাস্তব সমস্যার সমাধান তৈরি করে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি খাতে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারেন।
গত আট বছরে প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে উদ্ভাবকদের বিশ্বব্যাপী সংযুক্ত করতে এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছে আয়োজক কনিগসবার্গার ব্রিজেস ইনস্টিটিউট (কেবিআই)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই আট বছরে, একটি সাহসী ধারণা থেকে কেবিআই আজ পরিণত হয়েছে একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে; যা ব্লকচেইন ও ট্রাস্ট টেকনোলজি (বিসিটিটি) এবং ডেটা সায়েন্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (ডিএসএআই)-এর মতো উদীয়মান প্রযুক্তি খাতে হাজারো শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম
করে তুলেছে।