ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু যেন মুহূর্তেই স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা দেশ। এক সাহসী কণ্ঠের চিরবিদায়ে রাজপথ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবখানেই নেমে এসেছে শোকের ভারী ছায়া। শ্রদ্ধা আর বেদনার ঢেউয়ে ভেসে উঠছে ফেসবুকের টাইমলাইনও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে শোক ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় তারকারা।
বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ওসমান হাদির একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘শহীদ ওসমান বিন হাদি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে থাকবেন।’
চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ ওসমান হাদি ও তার শিশুপুত্রের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ অন্যদিকে, প্রয়াত হাদির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি আবেগঘন পোস্টে জনপ্রিয় অভিনেতা নিলয় আলমগীর লিখেছেন, ‘হাদি হয়তো এমন বিদায় চেয়েছিল। সবার দুআ আর ভালোবাসা নিয়ে চলে গেল। এমন সাহসী কণ্ঠস্বর কি আর পাব?’
আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান লিখেছেন, ‘ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তার পরিবার, তার ছোট্ট বাবুটা এই শোক কাটিয়ে উঠুক। রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হোক। দেশে শান্তি ফিরে আসুক হে দয়াময়।’
অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নামটা মনে রেখো, শহিদ - বীর শরীফ ওসমান হাদি।’ এছাড়াও মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল হাদির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে লিখেছেন, ‘এটা সত্যিই খুব কষ্টের আর একেবারেই মেনে নেওয়ার মতো না। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন, আর তার শোকাহত পরিবারকে, বিশেষ করে তার ছোট্ট বাচ্চাকে। ধৈর্য, শক্তি আর সান্ত্বনা দেন। তিনি যেই হোন না কেন, আমরা এমন একটা ভবিষ্যৎ চাই যেখানে রাজনীতি হবে ভালো, মানবিক আর দায়িত্বশীল, যেখানে মানুষের জীবনের মূল্য সবার আগে। এভাবে প্রাণ ঝরে যাওয়া কখনোই স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া উচিত না।’
এ তালিকা থেকে বাদ যাননি অভিনেতা আরশ খানও। তিনি লিখেছেন, ‘একটা একটা করে নিভে যাওয়া বাতিকে যে যাই পরিচয় দাও সবাই দেশের অংশ ছিল। কোনো না কোনো মায়ের সন্তান ছিল। একদিন জিতে যাবে ক্ষমতা কিন্তু দেখবে পৃথিবীটাই থেমে গেল।’
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে নির্বাচনি প্রচারণা শেষে ফেরার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন ঢাকা-৮ আসনের স্বত্রন্ত্র প্রার্থী এবং রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ইনকিলাব মঞ্চে’র মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে (এসজিএইচ) নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
তার মরদেহ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসে পৌঁছাবে। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে শুক্রবার সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে শহিদ ওসমান হাদির লাশ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করা হবে। ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
এদিকে শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে আগামী শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।