বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমনা বলেছেন, তিন দফায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় তারা (আওয়ামী লীগ) এসেছিলেন। ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি আবার এসেছিলেন ১৯৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি এরপরে তারা আবার এসেছিলেন ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি এই তিনবার তারা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে ছোপ ছোপ রক্ত, কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে হাত জোড় করে তারা জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছে ‘অতীতে আমাদের দল বাংলাদেশের জনগণের সাথে যে অন্যায় আচরণ করেছে, যে জুলুম করেছি। আমরা বিনা শর্তে মাফ চাই। একটিবারের জন্য আমাদেরকে আপনারা ক্ষমতায় দিন। আমরা ভালো হয়ে গেছি। এখন দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চাই।’ হাতে (শেখ হাসিনার) তসবি ছিল, মাথায় ঘোমটা ছিল, জনগণ সহজ সরলভাবে ধারণা করেছিল তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু না যখনই তারা মসনদে বসলেন তারা আপন রূপে আত্মপ্রকাশ করল।’
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বিজয় ম্যারাথনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি থেকে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে যে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছিল, একনায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছিল, যার পরিণতি স্বচক্ষে দেখেছে এদেশের মানু। এটা থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা নিবে কিন্তু ওই যে কথা আছে কয়লা ধইলেও ময়লা যায় না। সাবান আর সার্ফ এক্সেল যা দিয়েই ধুইতে যান না কেন, কালো কয়লা আরো কুচকুচে কালো হয়, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের মনে থাকার কথা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে গিয়ে বলেছিলেন, নেতাদেরকে তিরস্কার করে একটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোমরা কি হাতে চুড়ি পরে বসে আছো? তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন আর যদি আমার দলের একটা মানুষকে হত্যা করা হয়, তাহলে তার বিনিময়ে ১০টা লাশ ফেলে দিতে হবে। এই ছিল একজন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব জ্ঞানহীন হুংকার। সেই সময়টা খালে বিলে নদীতে নালায় জঙ্গলে হাটে মাঠে সর্বত্র মানুষের টুকরা টুকরা লাশ পাওয়া যেত, এরপরে জনগণের দ্বারা তারা প্রত্যাখ্যাত হলেন। আবার অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে পল্টন মোড়ে সাপকে যেভাবে মারা হয়, সেইভাবে লড়ি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি বিশ্ব বিবেক আর মানবতাকে লজ্জা দিয়ে সেদিন মাটিতে পড়ে যাওয়া নিহত শরীরের উপরে তারা লাফালাফি, নাচানাচি করেছিল। এরা কোন প্রজাতি? এরা কি আসলেই মানুষ প্রজাতি? সামনে বসে থাকা শিশুরা চিৎকার দিয়ে অনেকে বেহুশ হয়ে পড়েছিল, দেশ বিদেশ থেকে চিৎকার জানানো হয়েছিল কিন্তু না তারা এর মধ্য দিয়ে জানাল দিয়েছিল আগামীতে কৌশলে আমরা ক্ষমতায় যাবই, আর আমরা ক্ষমতায় গিয়ে যা করব আজকে তার একটা রিহারসেল দেখালাম বিশ্ববাসী। সেই তারা ক্ষমতায় এসে বিডিয়ার জেলখানায় হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে জামাতে ইসলামীর সম্মানিত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে তারা যে খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল আমরা তার বিভৎস্ব চেহারা শাপলা চত্তরেও দেখেছি।
জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সর্বত্র দেখেছি এমন কোন জনপদ নেই যেখানে তাদের হাতে লাশ মানুষ হয়নি, এমন কোনো জনপদ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে আমাদের মায়েদের ইজ্জত তাদের হাতে যেখানে লুণ্ঠিত হয়নি।’