Image description
১) রাজনীতিতে কেউই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। আমি যেমন যেকোনো ইস্যুতে বাছবিচার না করেই অন্য দলের সমালোচনা করি, তেমনি অন্য দলেরও আমার সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে। সুতরাং, সাদিক কায়েম যেমন সমালোচনার বাইরে নন, তেমনি নাহিদ, আসিফ ও মাহফুজ—কেউই সমালোচনার বাইরে নন।
বরং, তারা যেহেতু আমাদের রক্তের আমানত নিয়ে রাষ্ট্রীয় পদে ছিলেন, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তাদের নগ্ন সমালোচনা করার অধিকার এবং কাজের জবাবদিহিতা চাওয়ার অধিকার ছাত্রজনতার রয়েছে। জুলাইয়ে অবদানের জন্য কাউকে তার কাজের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে না—এই ধারণা নিতান্তই ফ্যাসিবাদী। সুতরাং, কারো সমালোচনা করলেই তাকে হত্যাযোগ্য করা হয় না।
 
নতুন বাংলাদেশে কোরামবাজি, চেতনার কারবারি ও নোংরামিকে রাজনৈতিক এজেন্ডা বানিয়ে নয়া রাজনীতির সবক দেয়া কিংবা জুলাই নিয়ে সর্বোচ্চ ক্রেডিটবাজি করে বিভাজনের নোংরা খেলা খেলে ভিক্টিম কার্ড খেলার পরও আমরা হজম করেছি—শুধু নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকে। এই আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালে তাদেরকে গাদ্দার বলার অধিকার ছাত্রজনতার আছে।
 
২) ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন উপদেষ্টা হয়েছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হলেও ক্ষমতার আসন ভাগাভাগিটা মোটেও নিষ্পাপ ছিল না। তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন থেকে। কিন্তু আজব বিষয় হচ্ছে—তারা রাষ্ট্রের উপদেষ্টা পদে থেকেও রাষ্ট্রের না হয়ে একটা কোরামেরই রয়ে গেলেন।
 
শিক্ষার্থীদের যে ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় গেলেন, তাদের বেমালুম সাইড করে দিয়ে একটা দলের উপদেষ্টা হয়ে গেলেন। রাষ্ট্র সংস্কারের পরিবর্তে একজন মাঝপথে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পার্টি গঠনে মনোযোগ দিলেন। বাকিরাও নির্বাচন করবেন না বলে দিনশেষে নিজেদের স্বার্থেই পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
তাদের এই কাজ নিয়েও প্রশ্ন তোলা যাবে না। আর দুইজন উপদেষ্টা দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে কী করেছেন—সেই প্রশ্নও নাকি করা যাবে না। করলে তাদের হত্যাযোগ্য করা হয়। একজন উপদেষ্টার পিএস তিনশ কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়, একটা কোরামের সমন্বয়কদের আর্থিক সক্ষমতা বেড়ে যায়, আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে শুরু করে টিউশন করে চলা তরুণদের—এই সব নিয়েও প্রশ্ন করা যাবে না। এটা তো ভাই প্রচণ্ড অটোক্র্যাটিক প্রবণতা।
 
৩) পাঠচক্র করা একদল তরুণ বুদ্ধিজীবী বলছে, একজন উপদেষ্টার এপিএস পুরো মন্ত্রণালয় দখল করে ফেলেছে। কিন্তু ঐ তরুণ বুদ্ধিজীবীদের বড় ভাইয়েরা গোটাকতক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েও নাকি হাত-পা বাঁধা—তাদের কোনো ক্ষমতাই নেই কাজ করার।
 
আবার ঐ এপিএস শিবিরের সাবেক সভাপতি হওয়াতে তাদের ঘোর আপত্তি। তাদের একজন উপদেষ্টা নাবিলা ইদ্রিস ও রাফে সালমান রিফাতকে সচিবালয়ে ঢুকতে না দেওয়ার ফরমানও দেন। কী অনিন্দ্য সুন্দর ক্ষমতার চর্চা! কিন্তু ব্রাদারদের জন্য সচিবালয়ের দরজা উন্মুক্ত। কারণ রাষ্ট্রের সবকিছু তাদের কোরামের হতে হবে। জুলাই একমাত্র তাদের। সুতরাং, রাষ্ট্র লুটেপুটে খাওয়ার একমাত্র অধিকার তাদেরই রয়েছে।
 
নিজেদের তিনজন উপদেষ্টা হলে সমস্যা নেই। কিন্তু এপিএস কেন শিবিরের সাবেক সভাপতি—সেটা নিয়ে ঘোর আপত্তি। আপনি জুলাইয়ে শহীদ কিংবা আহত হলেও শুধু শিবির হওয়ার অপরাধে সবকিছু মাইনাস হবেন। এটাই দায় ও দরদের রাজনীতি। হাসিনা যেমন সবকিছু নিজের ও তার বাপের মনে করত এবং তার বাপকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে একটা গড মনে করত—সেইটা নয়া সুরে হাজির হয়েছে। একদল রাষ্ট্রকে তাদের সম্পত্তি মনে করে এবং এতে একমাত্র তাদেরই অধিকার রয়েছে। কিছু ক্ষমতাসীনকে প্রশ্ন করা যাবে না। তারা শত কুরাজনীতি করলেও গাদ্দার বলা যাবে না, কারণ তারা গড—সমালোচনার ঊর্ধ্বে। এবং জুলাই একমাত্র তাদের অর্জন।
 
অতীত নিয়ে আলাপ দিতে গেলে আরও অনেক কথা আসবে। এই সব হজম করাও বেশ কঠিন। ৫ আগস্ট-পরবর্তী জুলাইকে কুক্ষিগত করে যে রমরমা ব্যবসা হয়েছে, তা আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য লিখে যাব। নোংরামি ও কোরামবাজিকে দায় ও দরদের রাজনীতির মোড়কে চালিয়ে দিয়ে নতুন কায়দায় যারা বৈধ ফ্যাসিবাদ উৎপাদন করেছে, ইতিহাস তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে—ইন শা আল্লাহ।
সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা 
ইনকিলাব জিন্দাবাদ