দুটি জোড়া খুনসহ প্রায় দেড় ডজন মামলার আসামি ও চট্টগ্রামের আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ও তার স্ত্রী তামান্নাকে জুলাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চান্দগাঁও থানা পুলিশ আবেদন করলে আদালত আবেদন গ্রহণ করেন। কিন্তু এখনো শুনানি না হওয়ায় আদালত কোনো আদেশ দেননি।
পুলিশের আবেদন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় নিহত শহীদ ফজলে রাব্বী হত্যা এবং নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বাড়ির সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে।
এই সঙ্গে খোরশেদ নামে আরো এক আসামিকে ফজলে রাব্বী হত্যায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। সাজ্জাদ সিলেট কারাগারে এবং তামান্না ফেনী কারাগারে আছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ফজলে রাব্বী হত্যা ও চান্দগাঁও থানার সংঘর্ষের মামলা তদন্তে তাদের নাম আসায় পুলিশ গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে। সম্প্রতি চারটি হত্যা মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন পায় সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিন।
এরপর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নির্বাচনের আগে তারা মুক্ত হলে চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা আরো অবনতি ঘটতে পারে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন নগরীর বায়েজিদ, অক্সিজেন, চান্দগাঁও এলাকায় পরিচিত ‘ছোট সাজ্জাদ’ বা ‘বুড়ির নাতি’ হিসেবে। কারণ বায়েজিদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ এলাকায় আগ থেকেই আছে বিদেশে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর সাম্রাজ্য।
আন্ডার ওয়ার্ল্ডে একই নামে দুই সাজ্জাদ হওয়ায় একজন সাজ্জাদ আলী, আরেকজন ছোট সাজ্জাদ নামে পরিচিতি পায়। বুড়ির নাতি সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিসকে হত্যার অভিযোগ আছে। ২১ অক্টোবর প্রকাশ্যে দিবালো চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ। ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে অক্সিজেন মোড়ে পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া।
সাজ্জাদ ১৭ জুলাই ২০২৪ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধে জড়ায় এবং আগের থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
এরপর ১৫ মার্চ ২০২৫ রাজধানীর একটি অভিজাত শপিং মল থেকে গ্রেপ্তার হয় এই সন্ত্রাসী। গ্রেপ্তারের পর তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেয় স্ত্রী তামান্না শারমিন। সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিশোধ নিতে ২৯ মার্চ রাতে নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে জোড়া খুনসহ কমপক্ষে তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটায় সাজ্জাদের সহযোগীরা। আর হানি ট্যাপে ফেলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে আরেক সন্ত্রাসী ঢাকাইয়্যা আকবরকে।
সবশেষ গত ৫ নভেম্বর নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্ল্যাহ তার নির্বাচনী এলাকার বায়েজিদে গণসংযোগ চালানোর সময় সেখানে উপস্থিত থাকা আরেক সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলার পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করা হয়। তাতেও উঠে আসে সাজ্জাদের নাম। এ ছাড়া রাউজানে কম পক্ষে সাতজন ছাত্রদল, যুবদল কর্মী হত্যায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।