Image description
হাদি হত্যাচেষ্টা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আরো তিনজনকে সন্দেহ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই তিনজন সাপোর্টিং টিমে ছিল। এখনো পরিচয় নিশ্চিত না হলেও তাদের শনাক্ত করার চেষ্টার কথা জানিয়েছে ডিবি।

হাদিকে গুলির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সাপোর্টিং টিমের তিন সন্ত্রাসীর গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি। হাদি যখন রিকশাযোগে বিজয়নগর রোডে আসেন, তখন ঘটনাস্থলে একজন মোবাইল ফোনে কথা বলছিল আর অন্যজন পায়চারি করছিল। এর কিছুক্ষণ পরই হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসী ফয়সাল। ওই সময় মোটরসাইকেলের চালকের আসনে ছিল আলমগীর।

পুলিশ জানায়, দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করার জন্য ডিবি ও র‌্যাবের ছয়টি টিম ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছে। গতকাল রোববার রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় র‌্যাবের একটি টিম অভিযান চালিয়েও ফয়সালকে পায়নি। এছাড়া নড়াইলে ডিবির একটি টিম অভিযান চালালেও সন্ত্রাসীদের কোনো হদিস পায়নি।

এদিকে, মূল সন্দেহভাজন দুই আসামি দেশে আছে নাকি ভারতে পালিয়ে গেছে, তা নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ দুই আসামির দেশে থাকার কথা জানালেও ডিবি সূত্রে জানা গেছে, তারা ঘটনার দিনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে গেছে।

গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, হাদিকে গুলি করা দুই সন্ত্রাসী ফয়সাল ও আলমগীর দেশেই আছে।

তবে ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই সন্ত্রাসী গত শুক্রবারই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। শুক্রবার তারা প্রাইভেট কারযোগে প্রথমে মিরপুর থেকে ময়মনসিংহে যায়। পরে সাইকেলযোগে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়।

এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত দুই সন্দেহভাজন চিহ্নিত হয়েছে। ওই দুজন হলো ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ। তারা ধরা পড়লে এ কাজের অর্থায়নকারীদের চিহ্নিত করা যাবে। র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, ধূর্ত প্রকৃতির শুটার ফয়সাল ও মোটরসাইকেলচালক আলমগীর ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের কাছে মোবাইল ফোন নেই। এজন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেও তাদের ধরা যাচ্ছে না। তবে ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব প্রথাগত সোর্স দিয়ে তাদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।

পুলিশ আরো জানিয়েছে, হাদির রাজনৈতিক শত্রুরা সম্ভবত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তবে অপরাধী ফয়সাল ও আলমগীর দুজন দেশেই আছে। তাদের পাসপোর্ট সিলগালা করা হয়েছে। কোনো ইমিগ্রেশন দিয়ে তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারবে না। পাশাপাশি সীমান্তের অবৈধ পথে যাতে বিদেশ যেতে না পারে, এজন্য সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন নজরুল ইসলাম জানান, হাদিকে ফয়সাল গুলি করেছে এবং আলমগীর মোটরসাইকেলের চালকের আসনে ছিল। তাদের দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য নেই। তবে তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য বিজিবি এবং সব বন্দরকে সতর্ক করা হয়েছে। দেশের সীমান্ত দিয়ে মানুষ পারপার করে এমন কয়েকজনের ব্যাপারে তথ্য নিয়ে দুজনকে আটক করে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। দুজনের পাসপোর্ট সিলগালা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গত শনিবার রাত থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ শুরু হয়েছে। নগরবাসীরও দায়িত্ব রয়েছে। কেউ তার আশপাশে কোনো দুষ্কৃতকারীকে দেখলে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হাজার হাজার জুলাইযোদ্ধার নিরাপত্তা ব্যক্তিপর্যায়ে বা আলাদা করে নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। তবে হাদির মতো যারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন অথবা গান পয়েন্টে আছেন, তাদের নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ইমিগ্রেশন ডেটাবেজ চেক করে এখন পর্যন্ত তাদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফয়সালের পাসপোর্ট নম্বর পাওয়া গেছে। তার সর্বশেষ ভ্রমণ তথ্য অনুযায়ী সম্ভবত গত জুলাই মাসে তিনি থাইল্যান্ড থেকে ফেরেন। এরপর ইমিগ্রেশন ডেটাবেজে আর তার বহির্গমনের কোনো তথ্য নেই। কারা হাদির ওপর গুলি করতে পারেÑএমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হাদির রাজনৈতিক শত্রুরাই তাকে গুলি করতে পারে।

ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবী আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টার মূল সন্দেহভাজন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়াকে আটক করেছে র‍্যাব। গতকাল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী আমার দেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে এ তিনজনের সঙ্গে ফয়সালের যোগাযোগ ছিল। সে সন্দেহ থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। আমরা তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করেছি। বাকি তদন্ত থানা পুলিশ করবে।

প্রার্থী ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার প্রার্থীর বায়োডাটা সংগ্রহ করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। পুলিশ জানায়, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ ওয়ারি প্রার্থীদের এ তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। হাদিসহ একাধিক নির্বাচনের প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে পুলিশের।

পুলিশ জানিয়েছে, সারা দেশে মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১টি। এর মধ্যে লাল চিহ্নিত অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা আট হাজার ৭৪৬টি, হলুদ চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩৫৯টি। হাদির ঘটনার পর প্রার্থী ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে পুলিশের। তবে পুলিশ জানিয়েছে, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ শঙ্কা দ্রুতই কেটে যাবে।

মোটরসাইকেলের মালিকের তিনদিনের রিমান্ড

হাদি হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদারুল আলমের আদালতে এ বিষয়ে শুনানির পর রিমান্ডের আদেশ হয়। এর আগে আব্দুল হান্নানকে আদালতে তুলে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার, অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিদের নাম-ঠিকানা ও অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার, ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং অর্থ ও তথ্যের প্রবাহ নির্ণয়ের জন্য রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। আবেদনে আরো বলা হয়, আসামি আব্দুল হান্নানকে র‍্যাব-২ আটক করে পল্টন মডেল থানায় সোপর্দ করে।

সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার

হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িতদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে তল্লাশি চৌকিতে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি রয়েছে। ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চেকপোস্ট স্থাপনসহ বিশেষ টহল, তল্লাশি অভিযান ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার পরিপেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সদর দপ্তর বিজিবির নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের (৩৯ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন যাতায়াতের পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সীমান্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

হামলাকারীদের ধরতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে : রিজওয়ানা

ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের ধরতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মানুষকে ভয় দেখাতে এবং নির্বাচনের ভিত দুর্বল করতে এ ধরনের হামলা করা হলেও নির্বাচন ঘোষিত সময়েই হবে বলে দাবি করেন তিনি। গতকাল সচিবালয়ে নতুন দায়িত্ব নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজওয়ানা বলেন, সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে এ ধরনের হীন, কাপুরুষোচিত ও চক্রান্তমূলক আক্রমণের যথাযথ জবাব দেবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সমন্বয় আছে দাবি করে তিনি বলেন, সমন্বয় না থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো।

সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) নূর মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার ও প্রেস) ড. আলতাফ-উল-আলমসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।