Image description

প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা দুই লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ থেকে ২০ লাখে উন্নীত হয়েছে। এতে করে রাস্তায় বেড়েছে বিশৃঙ্খলা, যানজটে থমকে থাকছে রাজধানীর জনজীবন। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

রাজধানীতে ব্যাটারি রিকশার এখন অবাধ রাজত্ব। ভিআইপি বাদ দিয়ে এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে ব্যাটারি রিকশা চলে না। এতে করে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। মোড়ে মোড়ে হচ্ছে যানজট। এতে করে নগরবাসী খুবই ত্যক্ত-বিরক্ত। ভুক্তভোগিরা মনে করছেন, বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের ব্যর্থতার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একই বক্তব্য তুলে ধরে বলেছেন প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ লাখে উন্নীত হয়েছে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন নিসআ’র সভাপতি আবদুল্লাহ মেহেদি দীপ্ত, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এস এম আহম্মেদ খোকন, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর পাহাড়ি ভট্টাচার্য, বুয়েটের এআরআই বিভাগের শিক্ষক আরমানা সাবিহা হক প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে আবদুল্লাহ মেহেদি দীপ্ত বলেন, মহাসড়কে সংঘটিত দুর্ঘটনার দুই-তৃতীয়াংশ ঘটছে ধীরগতির অটোরিকশার কারণে। গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসেবে ১৫ হাজার এবং বেসরকারি হিসেবে ২৫ হাজারের বেশি।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র এক শতাংশ ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, যার সংখ্যা ৪৩৭ জন। বাকি ৯৯ শতাংশ ভুক্তভোগী প্রচারণার অভাবে এই সুবিধা সম্পর্কে অজ্ঞ বলেও জানায় নিসআ। সভায় আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাস রুট রেশনালাইজেশনের পরিকল্পনা গৃহীত হলেও এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। বাস মালিকদের রেষারেষি এবং প্রতিযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকার ট্রাফিক সিগন্যাল আধুনিকায়নে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও তা অকার্যকর; ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনো সনাতন ‘হস্তচালিত’ পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। এ সময় সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা ‘সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ’ করার লক্ষ্যে ৯ দফা প্রস্তাবনা পেশ করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন।

ভুক্তভোগিরা জানান, ব্যাটারি রিকশা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, হাতে গোনা দু’তিনটি রাস্তা বাদে এখন সব রাস্তাতেই চলাচল করে। তিন চাকার এই বাহন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। হাসিনার পতনের পর কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার সুবাদে রাজধানীতে হু হু করেঢুকে পড়ে ব্যাটারি রিকশা। শুধু তাই নয়, এটি এক পর্যায়ে পলাতক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের পুনর্বাসন প্রকল্প হিসাবে রুপ নেয়। এখনও তারা বিকল্প জীবিকা হিসাবে ব্যাটারি রিকশাকে বেছে নিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের পুনর্বাসন করতে ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারি রিকশা নামান। এতে রোজগারের পাশাপাশি যে কোনো মুহূর্তে আন্দোলনে তাদেরকে সক্রিয়ভাবে রাস্তায় পাওয়ারও আশা ছিল। তার প্রতিফলন দেখা গেছে, এগুলো নিষিদ্ধ করতে গিয়ে সরকার আন্দোলনের মুখে পড়েছে। কথায় কথায় তারা রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সাথে তারা পুলিশের উপর চড়াও হতেও দ্বিধা করেনি। ভুক্তভোগিরা বলেন, সরকারের তখনই উচিত ছিল এদেরকে শক্ত হাতে দমন করা। তা না করায় ব্যাটারি রিকশার সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, এগুলোকে উচ্ছেদ করতে গেলে আগামীতে যে কোনো সরকারকে বেগ পেতে হবে। ব্যাটারি রিকশার বিরোধীতা করে আসছেন বাস ও সিএনজি অটোরিকশা মালিক, শ্রমিকরা। তাদের ভাষ্য ব্যাটারি রিকশার কারণে যানজটে বাস বা অটোরিকশার ট্রিপ কমে গেছে। এতে করে আয়ও কমেছে। বাস মালিক সমিতিও এগুলো বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।