Image description

আসিফ এবং মাহফুজ কোন দলে যাবেন সেটা নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে অনুমান নির্ভর নিউজ ছাড়াচ্ছে। এসবের মূলে যে প্রশ্নটা, সেটা হল ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে সরকারে যাওয়া এই দুই ছাত্রনেতা তাঁদের বন্ধুদের তৈরি করা দল-এনসিপিতে কিভাবে একমোডেট হতে পারেন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া এবং পরে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারনে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের একটা সামাজিক স্ট্যাটাস তৈরি হয়েছে। ফলে যেকোন দলে যেনতেন ভাবে তাঁদের পদায়ন হয়ত সম্ভব না, এতে তাঁদের ব্যক্তিত্ব অনুসারে ভূমিকা রাখার সুযোগও সীমাবদ্ধ হয়ে যেতে পারে। সমাধান হতে পারে পার্টির সদস্যদের ভোট।

এনসিপি এখনো আহবায়ক কমিটি দিয়ে চলছে। দলটির দরকার ছিল কাউন্সিল আহবান করে দলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন করার। এতে করে দলে একটা কাঠামো এবং শৃঙ্খলা তৈরি হয়ে যেত। কে কত নাম্বার নেতা, ১ থেকে ১০ মধ্যে থাকলেন কিনা, সেসব নিয়ে মনমালিন্যে একটা ছেলেমানুষি। ম্যাসিউর পলিটিক্স হল তৃণমূলে কাজ করে দলের মধ্যে কে অবস্থান করে নিতে পেরেছেন এবং সে আলোকে সদস্যদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হয়ে আসা। উন্নত রাষ্ট্রে এভাবেই নেতৃত্ব নির্বাচন হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর অল্প কয়েক জন নেতা তৃণমূলে কার্যক্রম চালিয়েছেন, তারা সবাই দলে পরিচিত এবং জনপ্রিয়। যেমন এবি পার্টিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ভাই কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও একেবারে গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন মানুষকে বুঝতে, মানুষের সমস্যা বুঝতে। এবি পার্টির আরেক নেতা ডাঃ মিনার ভাই নির্বাচনের বহু আগে থেকে এলাকায় গিয়ে মানুষের পাশে থেকেছেন। একইভাবে জামায়াতের এডভোকেট শিশির মনির গিয়েছেন তৃণমূলে। এনসিপিতে দেখেছি হাসনাত, সার্জিস, তুষার গিয়েছেন স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায়। কুড়িগ্রামে চমৎকার কাজ করেছেন ড.আতিক মুজাহিদ, যিনি একাই অত্র অঞ্চলে এনসিপিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তরুণ এই নেতাগুলো জয়ী হোন বা না হোন, মাটি ও মানুষের সাথে যেই সম্পর্ক এনারা তৈরি করেছেন সেটাই তাদেরকে আগামী ২৫-৩০ বছর রাজনীতি করার রসদ জোগাবে।

আপনি সারাজীবন এলাকায় গেলেন না, কিন্তু নির্বাচনের সময় গিয়ে বললেন 'আমাকে ভোট দিয়ে এমপি বানান, আমি আপনাদের খেদমত করতে চাই', এরচেয়ে হাস্যকর রাজনৈতিক prank আর কি হতে পারে।

এনসিপিতে বহু লোক নেতা হতে চাইবেন, এটা ভাল, প্রতিযোগিতা যত বেশি তত দল শক্তিশালী হবে। তবে, নেতৃত্ব বিকশিত হবার সমান সুযোগ সবার জন্য রাখতে হবে। কোন ধরনের ইজম, এলাকাপ্রীতি, ভাইপ্রীতি যেন সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে বাঁধা তৈরি না করতে পারে। এছাড়া নেতা কোন স্থায়ী পদ নয়, নেতা যদি তার মেয়াদে দলকে বিস্তৃত না করতে পারেন, জাতীয় নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোন ফলাফল এনে দিতে না পারেন, বা স্থানীয় নির্বাচনে দলকে ভাল কোন ফলাফল এনে দিতে না পারেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তাকে পদত্যাগ করে অন্য নেতৃত্ব আসার পথ সুগম করে দিতে হবে। এভাবেই একটি দল চলমান থাকে, গতিশীল থাকে। গতিশীল নেতৃত্বই দলের প্রাণ। জুলাইয়ে হেন করেছেন, তেন করেছেন এজন্য ওমক ভাই তোমক ভাইকে দলের শোভাবর্ধনকারী হিসেবে নেতার পদে বসিয়ে রাখতে হবে, এসব হইল পুরাতন বন্দোবস্তের ভাবনা, এসব পুরাতন চিন্তা ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে।

যে কথাটা বলার জন্য এত কথা, আসিফ এবং মাহফুজের উচিত এনসিপিরই একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে দলে জয়েন করা এবং নিজ যোগ্যতায় কাউন্সিলের মাধ্যমে উঠে আসা। ভাই-ব্রাদার কোটায়, কোরামবাজি করে বেশি দিন রাজনীতি করা যায় না।

রাজনীতিতে স্বাগতম এবং শুভ কামনা। 

 

নাজমুল হাসান