Image description

মালয়েশিয়ায় শ্রমশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে তলানিতে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সিংহভাগই দখল করে নিয়েছে প্রতিবেশী নেপাল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া। পশ্চিম মালয়েশিয়ার মূল শ্রমবাজারে গত জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পাঠিয়েছে মাত্র ২৯০ জন কর্মী। বিপরীতে নেপাল থেকে গেছে ২১ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রায় ২০ হাজার কর্মী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের চলমান সিদ্ধান্তহীনতা আরও দীর্ঘ হলে নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার কাছে হারাতে হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ শ্রমবাজার। জানা গেছে, মালয়েশিয়ার মূলত দুই অংশে বাংলাদেশের কর্মীরা কাজের জন্য যান। এর মধ্যে পশ্চিম অংশ পেনিনসুলা মালয়েশিয়া অর্থাৎ কুয়ালালামপুর, জোহর, পেনাং, পুত্রজায়ার মতো উন্নত ও জনবসতিপূর্ণ স্থানগুলোতে কয়েক লাখ কর্মীর চাহিদা ও কর্মসংস্থান হয়। অন্য অংশ পূর্ব মালয়েশিয়ার সাবাহ ও সারওয়াক রাজ্যের বনাঞ্চলে শুধু ‘প্লান্টেশন’ ক্যাটাগরিতে কর্মী নিয়োগ হয়। ভিন্ন সরকারের অধীনে পরিচালিত সাবাহ ও সারওয়াকে এখনো বাংলাদেশিদের পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সেখানে পুরো বছরেই চাহিদা মাত্র ৫ হাজারের মতো। মূল পেনিনসুলা মালয়েশিয়ার ৫ লাখ কর্মীর শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য রয়েছে বন্ধ।

পরিসংখ্যান অনুসারে, পেনিনসুলা মালয়েশিয়ায় চলতি বছরে ৪১ হাজার ৩৭৩ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শুধু তিন ধাপে ২৯০ জন কর্মী পাঠানো গেছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৪০, নভেম্বরে ৬০ ও ডিসেম্বরে পাঠানো গেছে ৯০ জন। কিন্তু এখানে প্রতি মাসে নেপাল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ৫ হাজারের বেশি কর্মী পাঠানো হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া থেকে পাঠানো হয়েছে ১৯ হাজার ৯৯০ এবং নেপাল থেকে ২১ হাজার ১৮৩ জন। এ দুই দেশ থেকে ইতোমধ্যে আরও ৫০ হাজার শ্রমিক পাঠানো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মালয়েশিয়ার অন্যতম সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এ ব্যর্থতা নজিরবিহীন।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৫ সালে মালয়েশিয়া সরকার ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ১৫ দেশের জন্য শ্রমিক নিয়োগ উন্মুক্ত করে। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক প্রেরণের একমাত্র দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)। তবে রোয়েসেলে অদক্ষতা, অস্বচ্ছতায় শ্রমবাবাজারে কর্মী পাঠানোর হার চরম হতাশাজনক। অভিযোগ উঠেছে, বোয়েসেলের জন্য বরাদ্দকৃত ওয়ার্ক ওয়ার্ড সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হলেও শ্রমিকদের কাছ থেকে মাথাপিছু অযৌক্তিকভাবে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও বোয়েসেল অবৈধ ও অননুমোদিত মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে ভিসা কিনছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা হলেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক এজেন্ট জাস্টওয়ান্ট সিং এবং মালয়েশিয়ার নাগরিক আলতাব।

প্রতিটি ভিসার জন্য বোয়েসেল তাদের ৭৫ হাজার টাকা পরিশোধ করছে, যা জিটুজি নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন এবং শ্রমিকদের শোষণ ও অনৈতিক নিয়োগব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব অনিয়ম ও ব্যর্থতা মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে সংস্থাটি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এদিকে ব্যর্থতা কাটাতে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১৫টি সরকারি বৈঠক করা হয়েছে। এ ছাড়া আলোচনা করতে দুই দফায় মালয়েশিয়ায় যান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তার পরও কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। এখনো রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ও আরও কয়েকটি ইস্যুতে আটকে আছে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত। ফলে প্রতিদিনই নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়ছে বাংলাদেশের এ সম্ভবনার শ্রমবাজার।