খোদ রাজধানীর বুকে খাল-বিল ভরাট করে গায়ে গা লাগিয়ে প্রকাশ্যে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ। সম্পূর্ণ আইনবিরোধী এ কাজ যেন দেখার কেউ নেই!
এমন বাস্তবতায় রাজউক থাকার পরও নতুন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু বর্তমান আইনই যেখানে মানা হচ্ছে না, সেখানে নতুন কর্তৃপক্ষ কি পরিস্থিতি বদলাতে পারবে? কতটা কাজে আসবে নতুন আইন? এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার জবাবদিহি নিশ্চিতের তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা একশ বছর ছুঁইছুঁই নবী হোসেন। এক সময় যে জমিতে ফসল ফলিয়েছেন, সেখানে গেল দশকে দাঁড়িয়ে গেছে একের পর বহুতল ভবন। বলছিলেন, বালু দিয়ে ভরাট করে জলাভূমিতে নির্মিত এসব ভবন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প নাড়া দিলে থরথরিয়ে কাঁপে। মনে হয় এখনই পড়ে যাবে। এগুলো তো সব জমিন ছিল, ড্রেজার দিয়ে সব ভরাট করা হয়েছে।’
দীর্ঘদিন ধরে রামপুরা খালের ওপর নির্ভর করেই জীবন চলছে শাহ আলমের। তিনিও বলছিলেন, কীভাবে খালের জায়গা দখল করে, গড়ে উঠছে এই নগরী।
কিন্তু জলাধার সংরক্ষণ অথবা ভবন নির্মাণের সব আইনেই খাল, বিল কিংবা ডোবায় ভবন তৈরি অবৈধ। সারা বিশ্বেই জলাভূমিতে বালু ফেলে ভবন নির্মাণে আছে সুনির্দিষ্ট বিধি। তবে বাংলাদেশে এর ব্যত্যয় রোজকার চিত্র।
নগর পরিকল্পনাবিদ আদেল মাহমুদ বলেন, ‘ছোটো আকৃতির ভবন থাকলে তাও দুর্যোগ কম হয়। ভবনের উচ্চতা যত বেশি হয়, তত বিপদের শঙ্কা বাড়ে। আপনি যতই পরিকল্পনা করেন, জলাভূমিতে ভবন থাকলে সেটা ভয়াবহ দুর্যোগের কারণ হতে পারে।’
এর বাইরেও একই দেয়ালে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পড়া ভবনও হয়তো কেবল এ শহরেই চোখে পড়ে। এসব ঠেকাতে লোকবল সংকটের কথা বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা রাজউকই আবার সরকারি আবাসন প্রকল্প নির্মাণে ব্যাপক আগ্রহী।
দেশের আইন অনুযায়ী যেকোনো ৫ তলার অধিক পাশাপাশি থাকলে দুটি ভবনের মাঝে অন্তত ৩ মিটার ফাঁকা রাখতে হবে। নতুন করে তৈরি হওয়া এসব ভবনের কোনোটি এ নিয়ম মানে না।
এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি নতুন রাজউক অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যেখানে স্থাপনা ও নির্মাণ কাজের অনুমোদনে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং জমির পুনর্বিন্যাস থেকে শুরু করে জলাশয় ও প্রাকৃতিক জলাধার সুরক্ষার বিধান রাখা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন বিদ্যমান আইনের প্রয়োগই যেখানে ব্যর্থ, সেখানে নতুন কর্তৃপক্ষ আর আইন কতটা কাজে আসবে?
আইনঅজ্ঞ মঞ্জিল মোরশেদ বলেন, ‘রাজউক কাজ করছে না। তারা অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের কোনো মনিটরিং চোখে পড়ছে না।’
নগর পরিকল্পনাবিদ আদেল মাহমুদ বলেন, ‘চোখের সামনে একের পর এক খাল ভরাট হয়ে যায়। ভবনগুলো অবৈধভাবে নির্মাণ হয়। আইন প্রয়োগে আগ্রহী না হলে আইনের সংস্কার দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’
কেবল আইন তৈরি নয়, বরং আইন মানতে বাধ্য করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সততা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
যদিও নতুন অধ্যাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজউকের সঙ্গে সংযুক্ত চুক্তি কিংবা শেয়ারে যুক্ত থাকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিকে ইতিবাচক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।