ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক ইতিহাস ও সমকালীন বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল বাস্তবতা নিয়ে বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ফ্যাসিস্টদের দলীয় সম্পত্তি না। মুক্তিযুদ্ধ ‘পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন’ ও, যেইখানে আমাদের সবার সমান ভাগ আছে। এই ভাগ ছাইড়া দিয়া মুক্তিযুদ্ধকে কারো লকারের ৮৩২ ভরি স্বর্ণ বানানোর মেশিনে পরিণত করার রাজনীতি আর করতে দেয়া যাবে না।’ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মির্জা গালিব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু আমাদের সবার আবেগের জায়গা, এইটাকে সামনে রাইখা শেখ মুজিব, হাসিনা আর আওয়ামীলীগরে রিলেভেন্ট রাখার একটা রাজনীতি করা হয় সবসময়। গত পনের বছরের যে ফ্যাসিবাদ - এইটার পরতে পরতেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়াইয়া ছিটাইয়া ছিল। এই জন্য আগস্টের বিপ্লবে ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভাঙচুর করছে। পরে ধানমন্ডি ৩২। আপনি জয় বাংলা বলে আমারে গুলি করে মারবেন, জয় বঙ্গবন্ধু বলে রাতের বেলা আমারে ধরে নিয়া যাবেন - আর এরপরও আমি প্রবল শ্রদ্ধার সাথে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলব - কোন ভাবেই এইটা আপনি আশা করতে পারেন না।’
তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে আওয়ামী ইতিহাস (ভারতীয় ইতিহাসও বটে), সেইখানে ৭১ এর আগে বাঙালির কোন অতীত নাই, শেখ মুজিব বাদে কোন নেতা নাই। এইখানে এমনকি ভাসানীও নাই, তাজউদ্দীনও নাই। এই চরম দলীয় ইতিহাসের মধ্য দিয়া আওয়ামীলীগ, বাম আর সেকুলাররা যেই রাজনীতি দাড় করায়, সেইটা এসেনশিয়ালী ফ্যাসিস্ট আর ইসলামোফোবিক হইয়া উঠে। বাংলাদেশ যে জেনারেশনাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়া যাইতেছে, তাতে এই ফ্যাসিস্ট আর ইসলামোফোবিক ইতিহাস চর্চা এবং রাজনীতির একটা সমাপ্তি ঘটবে সামনের দিনে।’
বাঙালি মুসলমানদের দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দিল্লির শাসনের বিপক্ষে দাড়ায়ে মুসলমান শাসকদের স্বাধীন সুলতানী আমল, ব্রিটিশদের উপনিবেশ থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের আজাদির আন্দোলন, ৪৭ এর স্বাধীনতা, ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ গঠন, ৭৫ এ সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন, ৯০ এর গনঅভ্যুত্থান, এবং ২০২৪ এর গনঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ২.০ গড়ার যাত্রা - এই সবই আমাদের রাজনৈতিক পথ চলা, আমাদের ইতিহাসের মাইলস্টোন মোমেন্ট। ৪৭-৭১-২৪ এক সাথে ধারণ করে, বাঙালি আর মুসলিম - এই দুই আইডেন্টিটি এক সাথে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
শেখ মুজিবকে ইতিহাসের দ্বৈত চরিত্রে দেখার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও লেখেন, ‘আমাদের ইতিহাসের নায়কদের মধ্যে শেখ মুজিব থাকবেন, আমাদের ইতিহাসের ভিলেনদের মধ্যেও শেখ মুজিব থাকবেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের দলীয় ইতিহাস ব্যবহার করে শেখ মুজিবকে কাল্ট ফিগার বানাইয়া ফ্যাসিবাদ তৈরি করার যে প্রজেক্ট - এইটা গুরুতরভাবে ফেইল করছে। এই প্রজেক্ট আর দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে হবে না - এইটার ব্যপারে শিউর থাকতে পারেন।’
শেষে বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. গালিব লেখেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ফ্যাসিস্টদের দলীয় সম্পত্তি না। মুক্তিযুদ্ধ ‘পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন’ ও, যেইখানে আমাদের সবার সমান ভাগ আছে। এই ভাগ ছাইড়া দিয়া মুক্তিযুদ্ধকে কারো লকারের ৮৩২ ভরি স্বর্ণ বানানোর মেশিনে পরিণত করার রাজনীতি আর করতে দেয়া যাবে না।’