তিন দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একের পর এক কর্মসূচির তোড়ে নমনীয় হয়েছিল সরকারও। দাবির প্রেক্ষিতে দেয়া হয় সুস্পষ্ট বার্তা। কিন্তু শেষ সময়ে এসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাকে জিম্মি করে আন্দোলনকে ভালো চোখে দেখেনি কোনো মহলই। শিক্ষকরাও পরীক্ষা বন্ধ রাখায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন অনেক স্থানেই। তারা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘হুঁশিয়ারি’ বার্তার পরই ফিরতে চেয়েছিলেন ক্লাসে। কিন্তু এরপরও বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ায় শিক্ষক নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাধারণ শিক্ষকরা। বলছেন, বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন শিক্ষক নেতারা। যার কারণে তিন দাবি আদায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
বুধবার থেকে তারা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’- কর্মসূচি পালন করা শুরু করেন। এদিনই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষকদের পরীক্ষার হলে ফিরতে বলা হয়। দেয়া হয় হুঁশিয়ারিও। সেদিন রাতে দীর্ঘ সময় অনলাইনে মিটিং করেন শিক্ষক নেতারা। এরপর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। পরদিন ৪২ শিক্ষক নেতাকে বদলি করা হয়। সেদিনই আন্দোলন থেকে সরে এসে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।
রংপুর জেলায় সবশেষ নিয়োগে যোগ দেয়া এক শিক্ষক বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দাবি আদায়ে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষাকে ইস্যু করাটা ঠিক হয়নি। আমরা পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলাম। অনেকেই চেয়েছিলেন। কিন্তু দলছুট হতে চাইনি। তারা পরীক্ষায় ফেরার ঘোষণা একটা দিন আগে দিলে ভালো হতো। আমাদের উপর সরকার নমনীয় থাকতো। কিন্তু এখন প্রতিপক্ষ হয়ে গেছি। দাবি আদায়টা অনিশ্চিত হয়ে উঠলো।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান। যাকে জয়পুরহাট থেকে নওগাঁয় বদলি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কোনোভাবেই পরীক্ষা প্রতিহত করিনি। আমরা নিজেরা পরীক্ষা নেইনি এটা সত্য। দেশের অধিকাংশ স্থানেই পরীক্ষা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আমরাও অভিভাবক, তাদের ক্ষতি আমরা চাই না। কিন্তু আমাদের দেয়ালে পিঠ গেছে। সেজন্যই এই কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। শিক্ষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন, আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্যই পদক্ষেপ ঠিক করা হয়। কেউ পরাজিত হওয়ার জন্য আন্দোলন করে না। জুলাই আন্দোলন ব্যর্থ হলে আমাদের বীরদেরকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো। সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়নে পিছিয়ে ছিল, সেজন্যই আমরা কঠোর হয়েছি। আমরা শিক্ষক, আমাদের মান-মর্যাদা, সম্মান রক্ষার আন্দোলন এটা। এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে মেধাবীরা এই পেশায় কখনই আসবে না। জাতি গঠনে প্রাথমিকে মেধাবীদের আনার আন্দোলন এটা।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের তিন দাবি হলো- সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড দাবির প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আপাতত ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।