Image description

গোটা দেশ এখন তাকিয়ে আছে এভারকেয়ার হাসপাতালের দিকে। গভীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছে একজন অকুতোভয় মানুষের সুস্থতার জন্য। ধর্মবর্ণগোত্র-নির্বিশেষে প্রার্থনা করছে জাতির ঐক্যের প্রতীক এক অনন্য ব্যক্তিত্বের জন্য। কবে বাংলাদেশ এমন একতাবদ্ধ হয়েছিল? সব ভেদাভেদ ভুলে কবে একসঙ্গে হয়েছিল এত মানুষের ভালোবাসা?

আমরা নানা পথে, নানা মতে বিভক্ত একটি জাতি। একমাত্র খেলাধুলা ছাড়া খুব কম সময়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের ঐক্যই সবচেয়ে বড় শক্তি। আর বিভক্তি হলো প্রধান দুর্বলতা। এ কারণেই আমরা স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধ হয় তখনই তারা হয় অপরাজেয়।

বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের ঐক্য এবং সংহতির প্রতীক। বারবার তিনি বিভক্তির দেয়াল ভেঙে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশ যখন স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট, এদেশের মানুষ যখন দিশাহারা তখনই তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। একজন গৃহিণী হয়েও সৃষ্টিকর্তার কল্যাণে তিনি হয়ে উঠেছেন জাতির কান্ডারি, পথপ্রদর্শক। গোটা জাতিকে এক সুতোয় গেঁথে ছিলেন। সব মত এবং পথের মানুষকে তিনি একতাবদ্ধ করেছেন অসাধারণ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে। এমনকি যারা তাঁকে অবজ্ঞা করেছে, অসম্মান করেছে তাদেরও তিনি সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। অকুতোভয় বীর সেনাপতি তিনি। যিনি আপস করেননি তার গোটা রাজনৈতিক জীবনে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের পর দেশের মানুষ তাই তাঁকেই নির্বাচিত করে। তাঁর হাতেই তুলে দেয় দেশপরিচালনার চাবি। বিএনপি সবসময় রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থার পক্ষে ছিল। দলটির গঠনতন্ত্রের বিধান ছিল রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসন। কিন্তু জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বেগম জিয়া সংবিধান সংশোধনে রাজি হন। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। বাংলাদেশে প্রকৃত সংসদীয় গণতন্ত্রের তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপির গঠনতন্ত্রে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল না।

কিন্তু দেশের স্বার্থে ১৯৯৬ সালে তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন। বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তাঁর হাতেই তৈরি। এভাবেই সারাজীবন তিনি দেশের স্বার্থে জনগণের পাশে থেকে কাজ করেছেন। জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এ কারণেই তিনি হয়ে উঠেছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন একের পর এক। হিংসাত্মক, কুৎসিত রাজনীতির বিপরীতে তিনি, শান্ত, সৌম্য এবং সংযত ব্যক্তিত্বের এক প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাঁকে কেউ অমার্জিত কথা বলতে শোনেননি। কথা বার্তায় তিনি সবসময় মিতভাষী, মার্জিত। বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির একটি ধারা তিনি সৃষ্টি করেছেন।

কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথাবার্তা না বলেও যে রাজনীতিতে নিজের আদর্শের কথা বলা যায়, প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা যায় তার অনন্য উদাহরণ বেগম জিয়া। রাজনীতি প্রতিহিংসার জায়গা নয়, রাজনীতিতে প্রতিশোধ ধ্বংসাত্মক- এই বোধ তিনি জাগিয়ে তুলেছেন। যারা তাকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছে, যাদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিনা অপরাধে জেলে কাটিয়েছেন দুই বছরের বেশি সময়, তাদের সম্পর্কে তিনি একটি কটূক্তি করেননি। এটাই তাঁর অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এজন্যই এখন তিনি বাংলাদেশের সব মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত। দলমত নির্বিশেষে সবাই তাঁর আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা করছেন।

বেগম জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরল দৃষ্টান্ত। এদেশের রাজনীতি কেমন হওয়া উচিত তার একটি উদাহরণ তিনি। দেশবাসীর আশা তিনি দ্রুত সুস্থ হবেন। বাংলাদেশের জন্য, এদেশে সুস্থ রাজনীতির জন্য এবং জনগণের জন্য বেগম জিয়াকে প্রয়োজন