ক্যাপ্টেন তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর ক্যাপ্টেন তানভীরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার সময় ক্যাপ্টেন তানভীর তাকে পিলখানার ভেতরে ভারতীয় সংস্থা National Security Guard (NSG) of India-এর নাম বলেন।
বেগম তাসনুভার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘২৫ তারিখ তানভীরের সঙ্গে যখন আমার শেষ কথা হচ্ছে, তখন আমি ছিলাম খাটের নিচে। বাচ্চাদের নিয়ে তখন আমি লুকিয়ে ছিলাম, সেখান থেকে আমি আবার ওয়ারড্রবের মধ্যে লুকাই, কারণ বুঝতে পারছিলাম পাশেই কোথাও বিডিআর সদস্যরা ঘোরাফেরা করছেন। তানভীরের সঙ্গে শেষ ফোনালাপে তানভীর আমাকে বলেন, লীগের নেতারা অন্য পোশাকে এসেছেন। ওর মুখে আমি এনএসজি নিয়ে কিছু কথা শুনেছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না যে এনএসজি কী ও আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। আমি দুবার তাকে জিজ্ঞেস করেছি, এনএসজি কী? তখন একপর্যায়ে তিনি বেশ বিরক্ত হয়ে বলেন, Indians! Indians’.
এছাড়া বেগম তাসনুভা মাহা বলেন, তিনি চুল বড় তিনজনকে বিডিআরের টি-শার্ট ও স্যান্ডেল পরা অবস্থায় দেখেছেন, যারা তাকে হিন্দিতে গালাগাল করেছে এবং তার সন্তানদের ‘পাকিস্তানি লাডলা’ বলেছে। (সূত্র : শহীদ পরিবার সাক্ষী নম্বর : ১২)
পিলখানায় সংঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রায় ১১ মাস তদন্ত শেষে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। এই কমিশনের প্রধান হলেন মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হনতদন্ত কমিশনের ৩৬০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার তাপসের বাসায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের উপস্থিতিতে বিডিআর সদস্যদের একাধিক বৈঠক হয়। একটি বৈঠকে অফিসারদের জিম্মি করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়, পরে তা পরিবর্তন করে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের উপস্থিতিতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ২৪ জনের একটি দল বৈঠকে অংশ নেয়। সেখানে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তাপসকে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহায়তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একাধিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, লেদার লিটন ও তোরাব আলী। এসব পরিকল্পনা সম্পর্কে ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সিও কর্নেল শামস অবগত ছিলেন এবং তাপস তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সিদ্ধান্তের অনুমোদন নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন।