রাজধানীর উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই টাকার বিনিময়ে করা হচ্ছে পাসপোর্ট। প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ পাসপোর্টের কাজ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র। অভিযোগ উঠেছে, এই অবৈধ টাকার ভাগ পান অফিসটির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীও।
সম্প্রতি সময় সংবাদের ক্যামেরায় উঠে এসেছে এসব চিত্র। সরেজমিনে উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে টাকা দিলেই মেলে পাসপোর্ট। দরকার পড়ে না প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেরও।
অভিযোগ আছে, নিজ জেলা লিখে আবেদন নাকচ করে দেয়ার পরও অসংখ্য পাসপোর্টের কাজ হচ্ছে এখানে। টাকার বিনিময়ে এখান থেকেই পাসপোর্ট করছেন অনেকে।
উত্তরা পাসপোর্ট অফিস ঘিরে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক স্টেশনারি ও কম্পিউটার দোকানের বেশিরভাগই দালালদের। সেবাগ্রহিতা সেজে সেখানে ঢুকলেই মেলে অবৈধ উপায়ে পাসপোর্ট তৈরির সত্যতা। পরবর্তীতে সময় সংবাদের ক্যামেরাসহ গেলে বদলে যায় চিত্র। দোকান বন্ধ করে এদিক-সেদিক পালিয়ে যান দোকানদার ও দালালরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাস শেষে টাকার ভাগবাটোয়ারা করে নেন চক্রের সদস্যরা। চক্রটিতে রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের নাইট গার্ড বাবু ও আরেক কর্মচারী বশির। তাদের মাধ্যমে টাকা পান উচ্চমান সহকারী রনি সরকার ও রেকর্ড কিপার সুবির সরকার। এরপর সেই টাকা ভাগাভাগি হয়ে যায় উপপরিচালক পর্যন্তও।
ভুক্তভোগীরা বলেন, দালালরা কোড অনুযায়ী অফিসে পাঠিয়ে দেয়, তখন কাজটা তারা করে দেন। উপ-পরিচালক নুরুল হুদার মাধ্যমেই কাজগুলো হয়। আরেকজন বলেন, টাকা দিলে কাজ করে, না দিলে হয়রানি করে এটা পাসপোর্ট অফিস করে।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, বাবু ও বশিরকে আইডি নম্বর পাঠিয়ে দিলে তখন তারা এটা গ্রহণ করে এবং বলেন যে, এটা আমার চ্যানেলের মাধ্যম দিয়ে এসেছে। তখন তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই কাজ করে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলেই ক্ষেপে যান ঢাকার উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা।
তিনি বলেন, বাবু ও বশির নামে কেউ নেই এখানে।
পাল্টা সময় সংবাদকে বলেন,
আপনি যে অভিযোগ করেছেন সেটা যদি সত্য হয়, তাহলে তা প্রমাণ করুন।
এ বক্তব্য নেয়ার পর, প্রতিবেদকের মোবাইলফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে আসতে থাকে একাধিক মেসেজ। যেখানে টাকার বিনিময়ে প্রতিবেদনটি না করার প্রস্তাবও দেয়া হয়।
উপ-পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল মজিদ ফোনে বলেন, কিছু নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।
অনিয়মের বিষয়ে আগারগাঁওয়ে প্রধান কার্যালয়ে বক্তব্য জানতে গিয়ে দেখা দেয় আরেক বিপত্তি। সাংবাদিক প্রবেশে রয়েছে নানা বিধি-নিষেধ। মহাপরিচালকের দফতরে যাওয়ার আগে রেখে দেয়া হয় ক্যামেরা, মোবাইলসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এখানেও রয়েছে দালালের আধিপত্য।
প্রায় এক সপ্তাহ ঘোরানোর পর মহাপরিচালকের অনুমতিতে কথা বলেন প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক শিহাব উদ্দীন। তিনি অভিযোগের প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন।
শিহাব উদ্দীন বলেন,
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। এ ধরনের যদি অভিযোগ পাওয়া যায় অধিদফতর থেকে, তার বিরুদ্ধে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরইমধ্যে অভিযোগ পাওয়ার কারণে ৩ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
অনিয়ম, দুর্নীতি ছাড়াও উত্তরা অফিসের বিরুদ্ধে আছে রোহিঙ্গা পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগও। যার মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা শঙ্কা।