Image description

Rajib Ahamod(রাজিব আহমোদ)


প্লট দুর্নী‌তি মামলায় শেখ হা‌সিনা, সজীব ওয়া‌জেদ জয় ও সায়মা ওয়া‌জেদ পুতু‌লের সাজায় তা‌দের সমর্থক‌দের মধ‌্য প্রতি‌ক্রিয়া সাদামাটা। একমাত্র আর্গু‌মেন্ট হ‌চ্ছে, ইউনূসও পূর্বাচ‌লে ৪৮০০ শতাং‌শের প্লট নি‌য়ে‌ছে। মা‌নে, ইউনূস প্লট দুর্নী‌তি ক‌রে‌ছেন, তাই ক্ষমতার অপব‌্যবহার ক‌রে হা‌সিনা প‌রিবা‌রের ছয় সদ‌স্যের প্লট নেওয়া বৈধ।
 
জনাব জয় প্রথমবা‌রের মত গত ২২ মে দা‌বি ক‌রেন, পূর্বাচ‌লে ইউনূ‌সের জ‌মি র‌য়ে‌ছে। এক মি‌নি‌টের ফ‌্যাক্ট চে‌কে জানা যায়, নিঃস্বর্গ না‌মে যে পূর্বাচ‌লের রি‌সোর্টটি ইউনু‌সের ব‌লে জয় দা‌বি কর‌ছেন, তা ভুয়া। গ্রামীণ টে‌লিকম ট্রাস্টের নিঃস্বর্গ রি‌সোর্ট পূর্বাচলের সীমানা থে‌কে দেড় কি‌লো‌মিটার দূ‌রে, গাজীপু‌রের উলু‌খোলা এলাকায় (লিঙ্ক প্রথম ক‌মে‌ন্টে)।
 
শেখ হা‌সিনার বিরু‌দ্ধে যত অ‌ভিযোগ আছে, এর ম‌ধ্যে সব‌চে‌য়ে প্রমা‌ণিত হল প্লট দুর্নী‌তি। ও‌পেন এন্ড শাট কেইস। এত কাঁচা দুর্নী‌তি বোধ হয় বাংলা‌দে‌শে হয়‌নি। আমার ধারনা, উনার ক্ষমতার দ‌ম্ভে এতটাই বি‌ভোর ছিলেন, ভাব‌তে পা‌রে‌নি এসব নি‌য়ে কো‌নো দিন মামলাটা হ‌বে। নইলে, এক প‌রিবা‌রের ছয়জন নিজ না‌মে সরকা‌রি প্লট নেওয়ার মত বোকা‌মি করার কথা না।
প্লট দুর্নী‌তি মামলায় দ‌ন্ডিত সজীব ওয়া‌জেদ জয় আজ রা‌য়ের পর এমন প্রতি‌ক্রিয়া দেখা‌চ্ছেন, যেন কে‌ান অপরাধই হয়‌নি। তি‌নি লি‌খে‌ছেন, " এই জমি ব্যক্তিগত অর্থে কিনেছিলাম। পরিবারের কারোরই বাংলাদেশে এর আগে কখনও সম্পত্তি কেনা হয়নি। আমাদের যা সম্পত্তি সবই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া।"
 
অপরাধ‌টি তো এখা‌নেই হ‌য়ে‌ছ, কারণ আইনানুযায়ী শেখ হ‌া‌সিনা ও তাঁর সন্তানরা সরকা‌রি প্লট পে‌তে পা‌রেন না। ১৯৫৩ সা‌লের শহর উন্নয়ন আইনের প্লট অ্যা্লট‌মেন্ট বি‌ধিমালা-১৯৬৯ সালে গত বছর রহিত হয়েছে। নতুন নীতিমালা কার্যকর হয়েছে ২০২৪ সালে। তাই জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিবারের ক্ষেত্রে ১৯৬৯ সালের বিধিমালা কার্যকর হবে। বিধিমালা অনুযায়ী, কারো ঢাকায় জমি বাড়ি থাকলে তিনি প্লট পাবেন না। মা, বাবা, স্বামী/স্ত্রী একবার রাউজকের প্লট পেলে, আর পাবেন না। জনাব জয়ের বাবা ওয়াজেদ মিয়া ধানমন্ডিতে রাউজকের প্লট পেয়েছেন ১৯৭৩ সালে। ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর প্লটটির মালিক, তাঁর স্ত্রী, সন্তানরা জমিটির মালিক। তাই তাঁরা নতুন করে প্লট পাওয়ার অযোগ্য ছিলেন।
 
তাই নারা প্লট নি‌য়ে‌ছেন নগর উন্নয়নআই‌নের ১৩/এ ধারায়। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় অবদা‌নের জন‌্য। আপনার ও আপনার বো‌নের রাষ্ট্রীয় অবদান কী? দ্বিতীয় বিষয় হ‌লো, আপনার মা প্রধানমন্ত্রী হি‌সে‌বে নি‌জে‌কেই নি‌জে রাষ্ট্রীয় অবদা‌নের জন‌্য ১০ কাঠার প্লট দি‌য়ে‌ছেন! দুই সন্তান‌কে ২০ কাঠা জ‌মি দি‌য়ে‌ছেন। দু‌নিয়া‌তে এমন কন‌ফ্লিক্ট অব ইন্টা‌রে‌স্টের ন‌জির আ‌ছে?
শেখ রে‌হেনা, তাঁর দুই সন্তান ব‌বি ও আজ‌মিনার গুলশা‌নে বা‌ড়ি আ‌ছে। তারপরও তিনজন তিনটি ১০ কাঠার ক‌রে প্লট পে‌য়ে‌ছেন। তাঁরাও রাষ্ট্রীয় অবদা‌নের জন‌্য পে‌য়ে‌ছেন। তাঁ‌দের অবদান কী? ‌শেখ হা‌সিনা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় বোন, ভা‌গ্নে, ভা‌গ্নি‌কে সরকা‌রি প্লট দি‌য়ে‌ছেন। এক প‌রিবা‌রে ছয় প্লট!
 
নদীর পা‌ড়ে ছয়‌টি প্লট পাশাপা‌শি নি‌য়ে‌ছেন উনারা । তিন দি‌কে রাস্তা ও সীমানা প্রাচীর ক‌রিয়ে‌ছেন রাজউ‌কের পয়সায়। কাঠা প্রতি তিন লাখ টাকা হি‌সে‌বে ৬০ কাঠা জ‌মি‌র জন‌্য এক কো‌টি ৮০ লাখ টাকা দি‌য়ে‌ছেন সরকার‌কে। অথচ জ‌মির প্রকৃত দাম ৩০০ কো‌টি টাকা।
 
জয় একবার দা‌বি ক‌রে‌ছি‌লের, তি‌নি ১৩/এ ধারায় মন্ত্রী পদমর্যদার ব‌্যক্তি হি‌সে‌বে প্লট‌ পে‌য়ে‌ছেন। বা‌কিরা একইধারায় শহীদ প‌রিবা‌র হি‌সে‌বে কীভা‌বে প্লট পে‌য়ে‌ছেন। প্রশ্ন হল, তারা কোন শহী‌দের স্বজন। সরকা‌রি গে‌জেট অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ, পিলখানা, পার্বত‌্য এলাকার সংঘাত এবং জুলাই অভ‌্যুত্থা‌নে নিহতরাই শহীদ।
 
সরকারি জমি বাড়ি বরাদ্দের নীতিমালা অনুয়ায়ী, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের বাবা, মা, স্ত্রী/স্বামী এবং সন্তানকে পরিবার বোঝাবে। প্রশ্ন হলো, জনাব জয় এবং প্লট পাওয়া অপর পাঁচজনের মা, বাবা, স্বামী/স্ত্রী, সন্তানদের কে শহীদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে?
 
জয় গত ২২ মে লে‌খেন, ‘আমরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম।.... এরপর গৃহায়ণ মন্ত্রণালয় বিধি অনুযায়ী (অ্যালোকেশন অব বিজনেস ১৯৯৬) আবেদনগুলো অনুমোদন করে এবং রাজউককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে’। অ্যালোকেশন অব বিজনেস হলো, সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়কে যা যা ক্ষমতা দিয়েছেন।
 
বাহ কী চমৎকার! প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, মেয়ে, বোন, ভাগ্নে, ভাগ্নিরা তাঁর কাছে প্লটের জন্য আবেদন করছেন! তিনি দিয়েছেনও! দুনিয়ার ইতিহাসে এত বড় স্বজনপ্রীতি ঘটেনি। আর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্লটের জন্য কার কাছে আবেদন করেছিলেন? তিনিও নিজের কাছেই আবেদন করেছিলেন। তারপর নিজেই নিজের আবেদন অনুমোদন করে, নিজেকে প্লট দিয়েছেন! যা একটি ইতিহাস।May be an image of text that says