Image description

 এক নারী শিক্ষার্থীকে ‘উত্ত্যক্ত, অযাচিত স্পর্শ’ করাকে কেন্দ্র করেই মূলত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যে দোকানির কারণে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, পুলিশ তাকে আটক করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ওমর ফারুক গত ২৫ নভেম্বর গভীর রাতে এ ঘটনায় মামলা করেন। তাতে আসামি করা হয় আমবটতলা বাজারের দোকানি মোনায়েম হোসেনকে (৩৪)। তিনি যশোর সদরের ছাতিয়ানতলা মল্লিকপাড়ার হারুন-অর-রশিদের ছেলে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত ও গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগে দোকানি মোনায়েমকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলায় ২৬ নভেম্বর আটক করা হয়।

এজাহারে ড. ওমর ফারুক উল্লেখ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনের এক নারী শিক্ষার্থী তার কয়েকজন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কেনার জন্য যশোর সদরের আমবটতলা বাজারের মোনায়েম টেলিকম নামে ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে যান। দোকানে ভিড় থাকায় একটি ডিভাইস নিজেই খুলতে থাকেন ওই ছাত্রী। মোড়ক খোলার সময় ওই ছাত্রীর হাত কেটে রক্ত বের হয়। এ সুযোগে দোকানি মোনায়েম অসৎ উদ্দেশ্যে ওই ছাত্রীর হাত ধরে। ওই ছাত্রী তার হাত সরিয়ে নিয়ে দোকান থেকে সহপাঠীসহ বের হয়ে যান। পেছন থেকে তখন দোকানি অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। এতে মেয়েরা অপমানিত হন।

ক্যাম্পাসে ফিরে তারা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের জানান। তখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক ছাত্র ওই দোকানে গেলে মোনায়েম তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে পালিয়ে যান। বিষয়টি তিনি জানতে পেরে মোনায়েমের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দেবাশীষ হালদার জানিয়েছেন, আসামি মোনায়েমকে আটক করে বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

২৪ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে দোকানি মোনায়েমের বাগবিতণ্ডা হয়। এই সূত্র ধরে আশপাশের আরও ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। ছাত্ররা গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণ করলে তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামের লোকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে বলেন। মাইকে ঘোষণার পরপরই গ্রামের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হন। এরপর পরস্পরের প্রতি ইটপাটকেলও নিক্ষেপ চলে। ওই সময় চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাতে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

উদ্ভূত ঘটনায় দুইজন সাংবাদিকসহ ২৫ জন শিক্ষার্থী কমবেশি আহত হন। সাংবাদিকদের মধ্যে মানবজমিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম ও রাইজিংবিডির প্রতিনিধি ইমদাদুল হক আহত হন। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে ইট, লাঠি ও কিল-চড়ে আহত হয়েছেন। পাঁচ-ছয়জন রক্তাক্ত জখম হন।

এদিকে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন আটক মোনায়েমের স্বজনরা।

তাদের মতে, ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যার পরে এক মেয়ে তার দোকানে যান এবং পেনসিল ব্যাটারি খোঁজ করেন। তার দোকানে ব্যাটারি না থাকায় মোনায়েম পাশের দোকান থেকে একটি ব্যাটারি এনে ওই মেয়েটাকে দেন। ব্যাটারিটি খুলে দেখে তার মধ্যে কার্বন রড নেই। পরে আরও একটি ব্যাটারি এনে দেওয়া হয় মেয়েটিকে। অন্যপাশে মোনায়েম একটি মোবাইল ফোন মেরামত করছিলেন। মেয়েটি একটা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে পেন্সিল ব্যাটারির মুখ খুলতে গিয়ে অসাবধানবশত তার হাতের আঙুলে লাগে। তার হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। মোনায়েম একটু টিস্যু পেপার দিয়ে আঙুলটি মুড়িয়ে দেন। এরপর মেয়েটি কোনো কথাবার্তা না বলে চলে যান। ২৫ নভেম্বর মোনায়েম সারাদিন দোকানদারি করেছেন, কোনো সমস্যা হয়নি। রাত ৮টার দিকে হঠাৎ কয়েকজন ছাত্র তার দোকানে গিয়ে মারতে থাকেন। এই দৃশ্য দেখে আশপাশের দোকানদাররা এগিয়ে যান। তাদের সঙ্গে ছাত্রদের বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতিও হয়। পরে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে ছাত্রদের ধাওয়া করেন। একটি মেয়েকে সাহায্য করতে গিয়ে মোনায়েম উল্টো বিপদে পড়েছেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।

এদিকে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে দুইপক্ষ থেকেই।

আহত শিক্ষার্থীদের পাশে যবিপ্রবি উপাচার্য

শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা, আহতদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রদানের লক্ষ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ ছাত্রদের আবাসিক হল দুইটিতে অবস্থানরত আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সব ধরনের চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।

বুধবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মজিদ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভার আহ্বান করেন। সভায় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার সঠিক ও দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্নের ব্যবস্থা নেন। স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে তিনি বিকালে ছাত্রদের হল দুইটি পরিদর্শন করেন।

সর্বশেষ অবস্থা

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ক্যাম্পাসে নিস্তব্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে। ক্লাশ না থাকায় এবং শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ বাইরে অবস্থানের কারণে এমন অবস্থা রয়েছে।

এদিকে আমবটতলা এলাকার কতিপয় ব্যক্তি ফেসবুকে উসকানিমূলক কথাবার্তা লেখায় শিক্ষার্থীদের কেউই এখন ওই দিকে যাচ্ছেন না। প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য তারা পাশের চৌগাছা বাজারের দিকে যাচ্ছেন বলে ক্যাম্পাস সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির প্রক্টর ড. ইমরান খান বলেন, ক্যাম্পাস মোটামুটি শান্ত রয়েছে। বুধবারও কিছুটা উত্তেজনা ছিল।

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আমবটতলা ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটি মিটিং রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই মিটিং থেকে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসতে পারব।