Image description

প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গাজীপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন উদ্বোধনের মাত্র দুই বছর না যেতেই ভূমিকম্পে ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে রেজিস্ট্রি অফিসের চার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রতিদিনের সেবাগ্রহীতারা অতিরিক্ত চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে কাজ করছেন।

 

জেলা শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে মারিয়ালি এলাকায় আওয়ামী দলীয় বিবেচনায় নির্মিত ভবনটি শুরু থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। প্রাকৃতিক বিলের ওপর নরম মাটিতে ভবন নির্মাণ এবং স্থান নির্বাচনে সাধারণ দলিল লেখক ও স্থানীয়দের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এটি চালু করা হয়। সপ্তাহ খানেক আগের ভূমিকম্পের ফলে ওই ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় সেই আশঙ্কা নতুন করে সামনে এসেছে। এছাড়া দূরবর্তী অবস্থানের কারণে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ অতিরিক্ত যাতায়াত, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং আর্থিক লেনদেনের সমস্যায় পড়ছেন।

 
 
 

প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে জায়গাটি জনবসতি কম, নির্জন ও নিরাপত্তাহীন। আশপাশে নেই কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ফলে চরম ঝুঁকি নিয়ে জমি কেনা-বেচার অর্থ বহন করতে হচ্ছে। জমি কেনা বেচাসহ ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের একাধিক ঘটনা ঘটায় নতুন ভবনে স্থাপিত এনআরবিসি ব্যাংকও ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। দলিল লেখক ও নকল নবিসদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে নতুন ভবনে যেতে আগ্রহী ছিলেন না ৯০ শতাংশ দলিল লেখক ও নকল নবিস। এখন জনদুর্ভোগ দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে।

গাজীপুর জেলা সদর শহরে দীর্ঘদিন ধরে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম পরিচালনা হওয়ায় সাধারণ মানুষ সহজে সেবা গ্রহণ করতে পারতেন। দূরবর্তী স্থানে অফিস হওয়ায় সেবাগ্রহীতারা অতিরিক্ত সময় ও খরচের মধ্যে পড়ছেন।

সেবাগ্রহীতা, দলিল লেখক ও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন- রেজিস্ট্রি অফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা শহরের নিকটবর্তী নিরাপদ ও সুবিধাজনক স্থানে থাকা সবচেয়ে যৌক্তিক। এতে নিরাপত্তা, ব্যাংকিং সুবিধা, ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং প্রশাসনিক তদারকি সহজ হয়।

অফিসটি দূরবর্তী স্থানে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিল খান। রিটে ভবনের অবস্থান, পরিবেশগত ঝুঁকি, নিরাপত্তা সমস্যা ও জনগণের ভোগান্তি তুলে ধরা হয়।

বর্তমানে ভূমিকম্পে ফাটল ধরার পর শহরের কাছাকাছি উপযুক্ত স্থানে অফিস স্থানান্তরের দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। জেলা রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ভবনের ফাটলের বিষয়টি আমরা গণপূর্ত বিভাগকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত জানাবেন। আগে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

গণপূর্ত বিভাগের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. হেজবুল কবির জানান, গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে ১২টি ভবনে ফাটল দেখা গেছে। সব ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই ঝুঁকিপূর্ণতা নির্ধারণ করা হবে।

জেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল বাতেন বলেন, ইঞ্জিনিয়ারদের রিপোর্ট পাওয়া গেলে ভবনের প্রকৃত ঝুঁকি মূল্যায়ন সম্ভব হবে।

ভূমিকম্পে ফাটল দেখা দেওয়ায় শুধু ভবনের নিরাপত্তা নয়, দূরবর্তী স্থানে সেবা কেন্দ্রের যৌক্তিকতাও নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। নাগরিকদের দাবি গুরুত্বপূর্ণ এই জনসেবা যেন শহরের নিকটবর্তী নিরাপদ ও সুবিধাজনক স্থানে পুনর্বিন্যস্ত করা হয়, যাতে সবার জন্য নিরাপদ, দ্রুত এবং কার্যকর সেবা নিশ্চিত করা যায়।