অন্যদিনের মতোই সকালে ঘুম থেকে উঠে দোকানে যান শাহাদত হোসেন। শখ করে বাচ্চাদের জন্য কেনেন চকলেট-চিপস। কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ; ডাকাডাকি করেও সাড়া মিলছে না। পরে প্রতিবেশী হানিফ এগিয়ে আসেন। শাবল দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে দেখেন মাটিতে দুই শিশুর গলাকাটা মরদেহ আর আড়ায় ঝুলছে স্ত্রীর লাশ। এমন দৃশ্য দেখে সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারান শাহাদত। এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের খলিসাকান্দি গ্রামে।
স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শাহাদত হোসেনের স্ত্রী দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর নিজেও ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় তারা খুব মর্মাহত। এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারছেন না অনেকে।
নিহতরা হলেন- সাদিয়া মোস্তারিম (২৪), তার দুই সন্তান সাইফা আক্তার (৩) এবং সাত মাস বয়সী সাইফ উদ্দিন।
পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহের জেরে দুই সন্তানকে ‘হত্যার পর’ ওই নারী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে ওই নারীর স্বামীকে।
স্থানীয়রা জানায়, শাহাদত হোসেন বাড়ির বড়ছেলে। ৭ বছর আগে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ময়মনসিংহে কর্মরত ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে ছুটিতে বাড়িতে আসেন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে সাদিয়া মোস্তারিম বটি দিয়ে তার দুই সন্তানের গলা কেটে হত্যা করেন। পরে তিনি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ায় ঝুলে আত্মহত্যা করেন।’
তিনি বলেন, ‘ঘর থেকে রক্তমাখা বটি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রকৃত রহস্য জানতে শাহাদত হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তিনিও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
প্রতিবেশীরা জানায়, শাহাদাতের সঙ্গে তার স্ত্রীর বনিবনা ছিল না। মাঝে মাঝেই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। সোমবার রাতে ছোট ছেলে সাঈদ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে সাদিয়া তাকে নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলে আবারও সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে সাদিয়াকে মারধর করে শাহাদত। এতে অভিমান করে আলাদা রুমে ঘুমান তারা। পরে সকালে এই ঘটনা ঘটে। তাদের ধারণা, এটা হত্যাকাণ্ডও হতে পারে।
শাহাদতের মা মিনি খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলের সুখের জন্য বাড়ি ছেড়ে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করছি। আমার নাতিদের এমন মৃত্যু মানতে পারছি না।’
এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) হুসাইন মো. রায়হান বলেন, ‘হত্যার বিষয় উদঘাটনে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে কাজ করা হচ্ছে। দ্রুত হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’