‘তুই বড় ব্যবসায়ী। পাঁচ কোটি টাকা দিবি আমাদের, নইলে মাইরা ফালামু। বাঁচবে না তোর পরিবার’, দিন কয়েক আগে রাজধানীর পল্লবীর এক ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা চেয়ে এভাবেই প্রাণনাশের হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। চাহিদামতো চাঁদার টাকা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা ওই ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি করে। এর পর থেকে তিনি অনেকটা পঙ্গু হয়ে পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। শুধু পল্লবীর ওই ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেই নয়, রাজধানীসহ সারা দেশে গত বছরের ৫ আগস্টের পর এই রকম ঘটনা ঘটছে অহরহ। এভাবেই চলছে নীরব চাঁদাবাজি।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক এক পরিচালক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাঁর কারখানা চট্টগ্রাম ইপিজেডে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁর কাছে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। গত দুই যুগ আমি ইপিজেডকেন্দ্রিক ব্যবসা পরিচালনা করছি। রপ্তানি পণ্য উৎপাদন করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি। নেতৃত্ব দিয়েছি ব্যবসায়ী সংগঠনের। আর আমার কাছে চাওয়া হয়েছে চাঁদা। আর তা না দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। সেই হুমকি আমলে না নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আট মাস ধরে চরিত্র হনন চলছে অব্যাহতভাবে।’
ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের স্বনামধন্য এক নারী উদ্যোক্তা জানান, তাঁর কাছে নগরের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী (বড় সাজ্জাদ) এক কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছে। চাঁদা না পেয়ে একাধিকবার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই এখন আতঙ্কে।
এদিকে গত দুই দিনে সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিলে (রবিবার ও সোমবার) রাজধানীর কারওয়ানবাজার, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, উত্তরা, মতিঝিল এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজির তথ্য পাওয়া গেছে। এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা প্রতিদিন ১০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা দেন। হকার্স মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, দিনে তাঁদের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজরা হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা।
চাঁদাবাজদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামছে না। তাদের রোষানল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। এমনকি শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারাও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তেমনি বাড়িঘর নির্মাণ করতে গিয়েও দিতে হচ্ছে চাঁদা। চাঁদাবাজদের কমবেশি সবারই রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কেউ পুরনো দলের নেতা, আবার কেউ নব্য রাজনৈতিক দলের নেতা। আবার বড় নেতাদের নাম ভাঙিয়েও করা হচ্ছে দেদার চাঁদাবাজি। দিনে দিনে সারা দেশের এই চাঁদাবাজি অনেকটা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। শহর থেকে উপজেলা—সবখানেই একই চিত্র। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ অভিযোগ তুলছে, একদল ‘প্রভাবশালী’ রাজনৈতিক কর্মী, দলীয় পরিচয়ধারী কিছু নেতা চাঁদাবাজিতে বেশি জড়িত। পুলিশের অভিযানে কিছু চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার হলেও চাঁদাবাজি থামছে না। এমনকি রাজনৈতিক দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলেও চাঁদাবাজদের অপরাধ বন্ধ করছে না।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে সারা দেশে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা কঠিন, কিন্তু চাঁদাবাজির সমঝোতা খুব সহজ। এক চক্র পতনের পর অন্য চক্র দ্রুত সেই জায়গা দখল করে নেয়। তাঁর বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়, চাঁদাবাজি এখন রাজনৈতিক অর্থনীতির একটি স্থায়ী উপাদান। ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শুধু নিয়ন্ত্রক বদলায়, কিন্তু পদ্ধতি ও কাঠামো একই থাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদাবাজি ঘিরে দেশে নিরাপত্তাহীনতায় আছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষও।
গত কয়েক মাসে সারা দেশে দুই হাজার ৩২৫টির বেশি চাঁদাবাজির ঘটনার অভিযোগ যাচাই করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ব্যক্তি বা সংগঠনের যোগসাজশ পাওয়া যায়।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, রাজধানীতে আড়াই হাজারের বেশি চিহ্নিত চাঁদাবাজ রয়েছে। সারা দেশে প্রতিটি জেলার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ চাঁদাবাজদের একটি হালনাগাদ তালিকা করেছে। সেই তালিকায় প্রতিটি জেলায় এক হাজারের বেশি চিহ্নিত চাঁদাবাজ রয়েছে। সেই হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অর্ধলক্ষাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়ে তথ্য যাচাই করছে পুলিশ, যাদের মধ্যে বেশির ভাগ নতুন। পুলিশ সদর দপ্তর ও কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
চাঁদাবাজদের নিয়ে ডিএমপির মিরপুরের পল্লবী এবং তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদপুর থানার পুলিশের দুটি তালিকা কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, পল্লবী থানার পুলিশ ৬৬ জন চিহ্নিত চাঁদাবাজের হালনাগাদ তালিকা ধরে তদন্ত করছে। একই সঙ্গে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশের তালিকায় ১২৫ জনের নাম রয়েছে। এভাবে ডিএমপির প্রতিটি থানার পুলিশের তালিকা অনুযায়ী ৫০ থেকে ১০০ জনের নাম রয়েছে থানার হালনাগাদ তালিকায়।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, চাঁদাবাজি একটি সামাজিক সমস্যা। চাঁদাবাজদের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। চাঁদাবাজদের একটি হালনাগাদ তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
ডিএমপিতে ছয় মাসে চার শতাধিক মামলা : পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, চাঁদাবাজির অভিযোগে গত ১০ মাসে এক হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৫ জুলাই থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশের আট বিভাগে ৬৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ৩৭১ জনই ‘নতুন চাঁদাবাজ’। সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলা থেকে। তাদের মধ্যে ২২৩ জন নতুন চাঁদাবাজ। ছয় মাসে ডিএমপিতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৪১৯টি মামলা করা হয়েছে। সেসব মামলা তদন্ত করে শতাধিক চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছে পুলিশ।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দীর্ঘ সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক ছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে মাথা চাড়া দিয়েছে নতুন চাঁদাবাজরা। তাদের বড় অংশই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত।
পুলিশ বলছে, চাঁদাবাজির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের পতনে পুরনো চক্র দুর্বল হয়ে ‘শূন্যস্থান’ তৈরি হওয়া, রাজনৈতিক দলের সুযোগসন্ধানী নেতাকর্মীদের অস্থিরতার সুযোগ নেওয়া, আগে নজরদারির বাইরে থাকা অপরাধীদের এখন সক্রিয় হতে গিয়ে ধরা পড়া।
ব্যবসায়ী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি চাঁদাবাজির প্রধান ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে পরিবহন, বাজার, আবাসন ও শ্রমিক সংগঠন। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি স্থানীয় দাপটও কাজে লাগাচ্ছে চাঁদাবাজরা। গ্যাং সংস্কৃতিসহ নানা কারণে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও নতুন চাঁদাবাজ উঠে আসছে।
চাঁদা না পেয়ে শত খুন : সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চাঁদাবাজির ঘটনায় গত ১৪ মাসে সারা দেশে শতাধিক ব্যক্তি খুন হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে অন্তত ২০ জন খুন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। মগবাজার, মতিঝিল, বাড্ডা, গুলশানসহ কিছু এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেশি। এর মধ্যে বাড্ডার গুদারাঘাটে বিএনপি নেতা কামরুল আহসানকে (সাধন) গুলি করে হত্যা করা হয়। কেবল টিভি, ইন্টারনেটের সংযোগসহ চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে এই হত্যাকাণ্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের সহযোগীদের নাম এসেছে। এর আগে ১৯ এপ্রিল হাতিরঝিলে ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য আরিফ সিকদারকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানতে পারে, এই হত্যার নেপথ্যে আছে চাঁদাবাজিও। পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী পরিচয়ে চাঁদাবাজি শুরু হয়। এর বাইরে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগার থেকে বের হয়ে চাঁদাবাজি শুরু করে। এর আগে সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাড়িতে দ্বিতীয় কিস্তির চাঁদা নিতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন রিয়াদ। রংপুরের এক সাবেক এমপির ঢাকার গ্রিন রোডের বাড়ি থেকে পাঁচ কোটি টাকার ১১টি চেক নেওয়ার ঘটনাও জানা যায়। এ রকম আরো অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। পল্লবীর এক ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামিলুর নামের একজন আমার কাছে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়। এখন আমি পরিবার নিয়ে চরম বিপদে আছি।’
কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি মসলার ব্যবসায়ী। গত বছরের ৫ আগস্টের পরে অনেক চাঁদা দিয়েছি। এখন আরো লাখ টাকা চাঁদা চায় সন্ত্রাসীরা। দিতে পারিনি, তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
রহুল আমিনসহ বেশ কয়েকজন ট্রাকচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে লোড করার পর কয়েক ধাপে পথে চাঁদা দিতে হয়।’
কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিরা দেশে দুই শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, সারা দেশে নীরবে চাঁদাবাজি চলছে।
গোয়েন্দারা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর আলোকে পাঁচটি গোষ্ঠীকে দেশে চাঁদাবাজির মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা হলো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি অংশ, প্রশাসনের ভেতরে থাকা স্বার্থান্ধ গোষ্ঠী, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও বাহিনীচক্র এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা কথিত নেতাদের চক্র।
পরিবহনে ঢাকায় দিনে কোটি টাকার চাঁদাবাজি : জানা গেছে, শুধু ঢাকার ৫৩টি পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডেই প্রতিদিন আনুমানিক সোয়া দুই কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। মাস শেষে এই অঙ্ক ৬০ কোটি থেকে ৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত হয় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। সারা দেশে বাস-মিনিবাস খাত থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি অবৈধ টাকা সংগ্রহ করা হয় বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে।
চালক ও তাঁর সহযোগীদের অভিযোগ, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গাড়ি আটকে রাখা হয়। রুট বন্ধ করা কিংবা হামলার মতো ঘটনায় পড়তে হয়। এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি, শ্রমিক সংগঠনের নামে গড়ে ওঠা চক্র এবং প্রশাসনের একটি অংশের যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাট-বাজারে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি : দেশের প্রায় সব হাট-বাজারে চাঁদাবাজি এখন প্রতিদিনের ঘটনা। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের একাংশ জানিয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে বিভিন্ন সংগঠনের নামে প্রতিদিন দোকানপ্রতি ৫০ টাকা থেকে কয়েক শ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পণ্য পরিবহন বন্ধ, ব্যবসার সুযোগ সংকুচিত করা, এমনকি শারীরিক হামলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে থানায় খোন্দকার দেলোয়ারের পুত্রবধূ : গত ৬ অক্টোবর চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে থানার দ্বারস্থ হন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ তানজিন হামিদ মিতুল। চাঁদাবাজির ঘটনায় ডিএমপির হাতিরঝিল থানায় এই অভিযোগ করেন তিনি। থানার ওসি মো. রাজু বলেন, ওই মামলার তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
চাঁদাবাজি না থামলে গাড়ি বিক্রি বন্ধ : চাঁদাবাজির অভিযোগে গত ২০ অক্টোবর রাজধানীর বারিধারায় মানববন্ধন করেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন গাড়ি বিক্রয়কেন্দ্রে চাঁদাবাজি ও হামলার ঘটনা ঘটছে, কিন্তু অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গাড়ি ছাড়, নিবন্ধন ও সরকারকে রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এই খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন।
এ বিষয়ে বারভিডা সভাপতি আবদুল হক বলেন, ‘গত আগস্ট থেকে আমাদের সদস্যদের কাছে অজানা নম্বর থেকে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। কেউ কেউ হোয়াটসঅ্যাপে একে-৪৭ রাইফেলের ছবি পাঠিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১২টি গাড়ি বিক্রয়কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।’
আবদুল হক জানান, এসব ঘটনার পর পুলিশে জিডি করা হলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তিনি আরো বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এখন ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এ জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ‘চাঁদাবাজসহ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে র্যাব সারা দেশে তৎপর রয়েছে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কালের কণ্ঠের সারা দেশের স্থানীয় প্রতিনিধিরা]