কোথাও ভূমিকম্প হলে তা শনাক্ত করা হয় সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে। মাটি কেঁপে উঠলেই যন্ত্রটির সেন্সর কম্পন তরঙ্গকে গ্রাফে রেকর্ড করে। দেশে বর্তমানে ১৩টি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণাগার (সিসমিক স্টেশন) আছে। এগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, বরিশাল, কুমিল্লা, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, গঞ্চগড় ও খুলনায় অবস্থিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিসমিক স্টেশন যত বেশি হবে ভূমিকম্প নির্ণয়ের একিউরিসি বা নির্ভুলতা তত বেশি হবে। দেশে ১৩টি সিসমিক স্টেশন থাকলেও আরও বেশি সিসমিক স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি অটো এনালাইসিস ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব বেড়েছে। অটো সিস্টেমে এনালাইসিস ও সিসমিক স্টেশন বাড়ানো- দুটি বিষয়ই সামান্য মাত্রার ভূমিকম্প তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করতে বড় ভূমিকা রাখবে। সংশ্লিষ্টরা এমনটাই জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রামে দেশের প্রথম এনালগ সিসমিক স্টেশন স্থাপিত হয় ১৯৫৪ সালে। বর্তমানে দেশে ১৩টি ব্রডব্যান্ড অত্যাধুনিক সিসমি স্টেশন আছে। ভূমিকম্প হলে এই ১৩টি স্টেশন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তরঙ্গ ঢাকার হেডকোয়ার্টারের নেটওয়ার্কে রিয়েল টাইম ওয়েভর্র্মে চলে আসে। সেখানে এগুলো এনলাইসিস করে ফলাফল জানানো হয়।
সিসমিক ওয়েভ দুই রকম। একটি প্রি-ওয়েভ বা প্রাইমারি ওয়েভ। আরেকটি এস ওয়েভ বা সেকেন্ডারি ওয়েভ। এগুলো নানাভাবে হিসাব করে কত মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, তার উৎপত্তিস্থল কোথায় তা নির্ণয় করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর ম্যানুয়ালি এনালাইসিস করে ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই বিস্তারিত তথ্য দিয়ে থাকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অটো এনালাইসিস সিস্টেম চালু আছে। এতে সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে ভূমিকম্প হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১ মিনিটের মধ্যে একটি এনালাইসিস হয়ে যায়। ভূমিকম্পের তথ্য তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়। তবে এটি একেবারেই প্রাথমিক ফলাফল। পরবর্তীতে আবার ম্যানুয়ালি সব তরঙ্গ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিস্তারিত জানানো হয়ে থাকে।
আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, অনেক সময় ভূমিকম্পের তথ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাৎক্ষকিভাবে চলে আসে। অটোমেটিক একটি ফলাফল দেওয়া হয়। পরে আবার ম্যানুয়ালি বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্বব্যাপী এটাই নিয়ম।
তিনি আরও বলেন, ম্যানুয়ালি এনালাইসিসের সময় সংঘটিত ভূমিকম্পের মাত্রার সামান্য হেরফের হতে পারে। এমনকি লোকেশনেরও সামান্য হেরফের হতে পারে।
তিনি বলেন, আশা করি অটো এনালাইসিস আমাদেরও হবে। কিন্তু অটো এনালাইসিস হলেও ম্যানুয়াল এনালাইসিস আমরা করব। কারণ, ম্যানুয়ালি ডাটা এনালাইসিস হলো প্রকৃত এনালাইসিস। সেটির আলাদা গুরুত্ব আছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমিকম্পের মাত্রা সাড়ে ৭ বা ৮ হলে সেটি অনেক দূরে থাকা সিসমোমিটারেও ধরা পড়ে। দেশের সিসমোমিটারে বিশ্বের নানা দেশের বড় মাত্রার ভূমিকম্প ধরা পড়ার রেকর্ড আছে। কিন্তু ছোট মাত্রার ভূমিকম্প দুই বা তিন হলে সব স্টেশনে সেটি ধরা পড়ে না। এরকম মাত্রায় ঢাকা স্টেশনের ভূমিকম্প ধরা পড়লে সেটি চট্টগ্রামের সিসমো স্টেশনের ধরা নাও পড়তে পারে। আর এজন্যই আরও সিসমিক স্টেশন তৈরির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট সিসমিক স্টেশন আছে। অটো এনালাইসিস সিস্টেম তৈরি করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা ভাবছি। এক্ষেত্রে একটি প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, অটো সিস্টেমে মাটির অনেক নিচে সফটওয়্যারের মাধ্যমে খুব ছোট মাত্রার ভূমিকম্পও ধরা সম্ভব। ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে মানুষ বুঝতে পারে না। মেশিন যাতে সেটি বুঝতে পারে এর জন্য আরও বেশি সিসমোমিটার দরকার। ঢাকার পরে আমাদের সিসমিক স্টেশন আছে কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও খুলনায়। এখানে দূরত্বের একটি বড় গ্যাপ আছে। এটি যদি ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে নিয়ে আসা যায় তাহলে আরও ভালো হয়। তিনি আরও বলেন, একটি ভূমিকম্প হলে তিনটি স্টেশনের তরঙ্গ পেলেই আমরা ফলাফল বলতে পারি। ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ ও সাভারে যদি সিসমিক স্টেশন থাকে তাহলে এখানেই তিনটি স্টেশনের মাধ্যমে কম মাত্রার ভূমিকম্পও ধরা পড়বে।