Image description

২০২৬ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০ কোটি বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করবে সরকার। এসব পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ বর্তমানে পুরোদমে চলছে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে। এসব পাঠ্যবই মুদ্রণ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সংস্থাটি বিভিন্ন বেসরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এবারও পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ পেয়েছে ২০২৫ সালে পাঠ্যবই ছাপাতে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মসহ নানা অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে পড়া বেশ কয়েকটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। এসব অভিযোগে গত জুন মাসে ৩৬টি প্রেসের (মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান) বিষয়ে তদন্তও করে দুদক।

এনসিটিবির একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ বাগিয়ে নিতে এনসিটিবির কিছু অসাধু কর্মকর্তা সেই অভিযুক্ত প্রেসগুলোকে সহযোগিতা করছে। এ ছাড়াও অভিযুক্ত প্রেসগুলো বরাবরের মতো সরকারে থাকা কর্তাব্যক্তি ও ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ছাপার কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। এবারও নোয়াখালীর চৌমুহনীতে অবস্থিত কর্ণফুলি আর্ট প্রেস ও অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের ম্যানেজ করে তারা কাজ বাগিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এনসিটিবির বিতরণ শাখা জানায়, কর্ণফুলি আর্ট প্রেস ও অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসসহ বেশ কয়েকটি প্রেস মোটা অঙ্কের ও বেশি কাজ পেয়েছে এবার। তবে কত টাকার বা কতগুলো বইয়ের কাজ পেয়েছে তা জানায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির এক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কর্ণফুলি আর্ট প্রেস ও অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসকে কাজ দিতে এনসিটিবির কিছু লোক সর্বদা সহযোগিতা করে থাকে। এ ছাড়াও এ দুই প্রেসে এনসিটিবি থেকে যারা মনিটরিংয়ে যান, তাদের নানাভাবে ফাঁদে ফেলা হয়, কিংবা ম্যানেজ করা হয়। এ জন্য কেউ প্রেস দুটি মনিটরিং শেষে এনসিটিবিতে তাদের ব্যাপারে নেগেটিভ রিপোর্ট দেয় না। যারা দিতে চায়, তাদের নানাভাবে হুমকি বা বদলি করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বা এনসিটিবির অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তারা এসব করছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।  

জানা গেছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হবে। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ করছে ১০৩টি ছাপাখানা। এরমধ্যে নোয়াখালীর কর্ণফুলি আর্ট প্রেস ও অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসসহ আরও কয়েকটি প্রেস মোটা অঙ্কের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের কারখানা নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে। প্রেসটির স্বত্বাধিকার মো. কাউসার-উজ-জামান। এছাড়া কর্ণফুলি আর্ট প্রেসও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গণিপুরে অবস্থিত। এই প্রেসটির স্বত্বাধিকার হিসেবে রয়েছেন মো. হাসানুজ্জামান (রবিন)। যদিও নিম্নমানের কাগজ সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তারা।

দুদকের জালে থাকা প্রেসগুলো এবারও পাঠ্যবই ছাপানো কাজ পেল
এসব প্রেসের মধ্যে রয়েছে- অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস; আমিন আর্ট প্রেস; আনন্দ প্রিন্টার্স; অনন্যা, সরকার ও বলাকা প্রিন্টার্স; আনোয়ারা, কচুয়া প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স; অনুপম প্রিন্টার্স লি.; অটো ও মোল্লা প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স; বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রিন্টিং প্যাকেজিং; ভাই ভাই প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স;  ব্রাইট, প্রোমা প্রিন্টিং প্রেস; বৃষ্টি প্রিন্টিং প্রেস; দিগন্ত অফসেট প্রিন্টার্স; ন্যাশনাল প্রিন্টার্স; ফায়িজা প্রিন্টিং প্রেস; ফাথিন প্রিন্টিং; ফাইভ স্টার প্রিন্টিং; ফরাজী প্রেস পাবলিকেশন।

আরও যেসব প্রেস কাজ পেয়েছে, সেগুলো হলো- হাওলাদার অফসেট প্রেস; কাশেম এন্ড রহমান প্রিন্টিং প্রেস; আলিফ প্রিন্টিং প্রেস; মেরাজ প্রিন্টিং প্রেস; পানামা প্রিন্টার্স; মৌসুমী অফসেট; নুরুল ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস; প্রিয়ায়াংকা প্রিন্টিং; রেদওয়ানিয়া প্রেস; এস আর প্রিন্টিং; এস এস প্রিন্টার্স; শৈলী প্রিন্টার্স, টাঙ্গাইল অফসেট; সোমা প্রিন্টিং; ভয়েজার পাবলিকেশন্স।

প্রেসগুলো কীভাবে কাজ পাচ্ছে তা জানেন না বলে জানান এনসিটিবির বিতরণ শাখার নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান। তবে তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলি ও অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসও এবার কাজ পেয়েছে। তারাসহ আরও অনেকেই কাজ পেয়েছে। এই দুই প্রেসসহ আরও কয়েকটি প্রেস বড় কাজগুলো পেয়েছে।’

জানতে চাইলে এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদীর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রেসে ইন্সপেকশনে যাওয়া আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম, কে বা কারা কেমন রিপোর্ট দেয় তা বলতে পারব না। আমি যতবার প্রেসগুলোতে ইন্সপেকশনে গিয়েছি, যা দেখেছি তাই রিপোর্ট দিয়েছি। রিপোর্ট কার বিরুদ্ধে যাচ্ছে তা দেখার বিষয় নয়।’