আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগরের একাংশ) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী দেওয়া হয়নি।
এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। রুমিন সমর্থকরা আশাবাদী, দল তাকেই মনোনয়ন দেবে।
বিএনপির দুর্গ বা ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি জোটের শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে—এমন গুঞ্জনও রয়েছে। মনোনয়ন বিমুখ দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন- এমন আলোচনাও রয়েছে মাঠে। এসব হিসাব-নিকাশে এখন পর্যন্ত জামায়াত ইসলামীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে আসনটিতে।
আসনটির বিএনপির সমর্থকদের সাফ কথা- ‘এখানে বিএনপি দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে শরিক দলের কাউকে দিলে জামায়াতের প্রার্থী ঘুমিয়ে পাশ করবেন’।
এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মো. মোবারক হোসাইন আকন্দ। গত ১ জুন জেলার ৬ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই মাঠে বেশ তৎপর মোবারক হোসাইন আকন্দ ও উনার কর্মী বাহিনী। প্রতিদিনই তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে দুটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
জামায়াতের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনি এলাকা সরাইলের ৩ শহীদ জুলাই যোদ্ধার পরিবারকে জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে ২ লাখ করে মোট ৬ লাখ টাকা। প্রতিটি গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ ছাড়াও নির্বাচনি এলাকার দুই উপজেলায় ৫টি মেডিকেল ক্যাম্প করেছেন তারা। এর মধ্যে আশুগঞ্জে ২টি এবং সরাইলে ৩টি ক্যাম্প করা হয়। প্রতিবন্ধীদের মাঝে বিতরণ করেছেন হুইল চেয়ার। এছাড়া এলাকা হিসেবেও মোবারক হোসেনের অবস্থান বেশ ভালো। তিনি আশুগঞ্জের আন্দিদিল গ্রামের বাসিন্দা। এ উপজেলায় বিএনপির একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও দল থেকে মনোনয়ন না হওয়ায় আপাতত মোবারক হোসেন ছাড়া আশুগঞ্জ উপজেলা থেকে আর কোনো প্রার্থী নেই।
এদিকে এই আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন ঘোষণা না হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। প্রায় প্রতিদিন তিনি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন।
এ আসনের ১৯টি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯২ হাজার ৭৯৭। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৩৯ জন, নারী ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৫৬ জন ও হিজড়া ২ জন। সরাইল উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লাখ ৮৫ হাজার ১৭৬। আশুগঞ্জ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৪ জন।
সর্বশেষ সীমানা নির্ধারণে ফলে নতুন করে সংযুক্ত বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ও বুধন্তী ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ৫৬ হাজার ৯২৭।
আড়াইসিধা গ্রামের হাফিজুল মিয়া বলেন, এখান থেকে বিএনপির কেউ প্রার্থী না হলে মোবারক হোসেন ছাড়া উপজেলা থেকে আর কোনো এমপি প্রার্থী নেই। সেই হিসেবে এলাকার মানুষ হিসেবে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন তিনি।
এদিকে সরাইল উপজেলাতেও প্রচার চালাচ্ছেন জামায়াত প্রার্থী। এ আসনের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা গত ৫-৬ মাস পূর্ব থেকেই ভোটের জন্য মানুষের কাছে যাচ্ছেন। প্রার্থী নিজে উপস্থিত থেকে গ্রামে পাড়া মহল্লায় সভা সেমিনার ও উঠান বৈঠক করছেন নিয়মিত।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরে নিজসরাইল গ্রামের বাসিন্দা বিএনপির সমর্থক মো. আব্দুর রহমান শাহ কালু মিয়া বলেন, এখানে বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিলে জামায়াতের প্রার্থী ঘুমিয়ে পাশ করবেন। এই আসনটি শতভাগ ধানের শীষের। এখানে ধানের শীষের প্রার্থী চাই। নতুবা স্থানীয় নেতারা পদত্যাগ করা দরকার। পরগাছা নামক রোগে আর ভুগতে চাই না। জোটের প্রার্থী দিলে আমরা নেই। ফেলও করতে পারে।
সমাজকর্মী রওশন আলী, দুলাল মিয়া ও ব্যবসায়ী মো. হুমায়ুন মিয়া বলেন, বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাহিরে কাউকে সিলেক্ট করা মানেই জামায়াতের ভাগ্য খুলে দেওয়া।
নোয়াগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম বলেন, এ আসনে বিএনপি তাদের জোটের প্রার্থী দিলে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী পাশ করবেন। তারা সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। নির্বাচনি এলাকার প্রায় সর্বত্রই তারা উঠান বৈঠক করে ফেলেছেন। বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাই পারবেন এখানে ধানের শীষ উদ্ধার করতে। কারণ তিনিই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে দুটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন। তার জনপ্রিয়তাও অনেক বেশি।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, আমরা ধানের শীষ প্রতীকের দলীয় প্রার্থী চাই। দলীয় সিদ্ধান্তে জোটের প্রার্থী হলে প্রতীকটা ধানের শীষ না থাকাটা হবে ক্রটিযুক্ত। আশা করছি বিএনপি সরকার গঠন করবেন। তাই দলীয় এমপি দিয়ে এলাকার যতটুকু উন্নয়ন হবে, জোটের এমপির দ্বারা ততটুকু সম্ভব নাও হতে পারে।
সরাইল উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. জাবেদ উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার আগেই মানুষের সেবা করার চেষ্টা করছি। এই আসনে আমাদের দলীয় প্রার্থী এমপি হতে পারলে সব ক্ষেত্রে ন্যায়নীতি স্বচ্ছতা জবাবদিহি নিশ্চিত করব।
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মোবারক হোসাইন আকন্দ বলেন, দুটি উপজেলার নির্বাচনি এলাকার প্রায় ৭০ ভাগ গ্রামে আমার গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক শেষ হয়েছে। আমি সাধারণ মানুষদের যে সাড়া পাচ্ছি ইনশাআল্লাহ জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।