Image description

ভূমিকম্পে নিহত সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফিকে (২৩) শেষ বিদায় জানিয়েছেন তাঁর মা। গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সংঘটিত ভূমিকম্পে পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলিতে মাথায় ইট পড়ে মারা যান রাফি। এ সময় আহত হন তাঁর মা নুসরাত জাহান নিপাও।

শনিবার (২২ নভেম্বর) বাদ আসর রাফিকে বগুড়া শহরের নামাজগড় আঞ্জুমান-ই গোরস্থানে দাদা ও চাচার কবরের পাশে রাফিকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে বাদ জোহর শহরের সুত্রাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন বিকালে রাফির লাশ বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন মা নিপাকে ছেলের কফিনের কাছে আনা হয়। ছেলের মৃত্যুর কথা জানার পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। আহাজারি করতে থাকেন। তার বুক ফাঁটা কান্না দেখে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সবাই তাকে বুঝানোর পর তিনি কিছুটা শান্ত হন। এ সময় নিপা ছেলেকে কবর দেওয়ার সময় কবরে নামার জন্য মেঝ চাচা মামুন মোরশেদ টুলু ও মামা নাহিয়ান ইসলাম অন্তরকে অনুরোধ করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা নিপা কফিনে থাকা ছেলে রাফির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। তিনি ছেলেকে বলেন, ‘বাবা যাও তোমার সঙ্গে বেহেশতে দেখা হবে।’ এ সময় শুধু আত্মীয়-স্বজন নয়; উপস্থিত সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রাফির মামা ও সহপাঠী নাহিয়ান ইসলাম অন্তর জানান, ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকালে রাফিউল ইসলাম রাফির লাশ বগুড়া শহরের সুত্রাপুরের বাড়িতে আনা হয়। পৃথক অ্যাম্বুলেন্সে মা নিপাকে এনে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাদ জোহর বগুড়া শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠে রাফির দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন।

রাফিউল ইসলাম রাফির চাচা আব্দুস সালাম রুবেল জানান, শুক্রবার সকালে নিপা তার ছেলে রাফিকে নিয়ে বাজার করার জন্য কসাইটুলিতে যান। তারা একটি গোশতের দোকানের সামনে ছিলেন। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের পরপরই ভূমিকম্প হয়। এ সময় প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে। মাথা ও বুকে ইট পড়ে ঘটনাস্থলেই রাফির মৃত্যু হয়। হাত, কাঁধ ও চোখে গুরুতর আঘাত পান তার মা নাসরিন জাহান নিপা। স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক রাফিকে মৃত ঘোষণা করেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পাওয়া মা নিপাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনার সময় রাফির বাবা অধ্যক্ষ ওসমান গণি রুস্তম বগুড়ার বাড়িতে ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় রওনা দেন। এদিকে রাফির মৃত্যুর সংবাদ বগুড়ায় পৌঁছার পর আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি ও সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তারা শহরের গোহাইল রোড, সুত্রাপুরের বাড়ি ‘রমিছা ভিলায়’ ভিড় করেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মা নুসরাত জাহান নিপা ভূমিকম্পের সময় পাওয়া আঘাত থেকে আশঙ্কামুক্ত হয়েছেন। তবে ছেলের শোক কেটে উঠতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পরে বাদ আসর রাফিউল ইসলাম রাফিকে শহরের নামাজগড় আঞ্জুমান ই গোরস্থানে দাদা ও চাচার কবরের পাশে চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হয়।