Image description
 
 

বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছরের নৈরাজ্যকর অপশাসন শেষ হলেও ফ্যাসিস্টের দোসর ও সুবিধাভোগীদের অনেকেই রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আওয়ামী দুঃশাসনের সময় বিশেষ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে এখন তাঁরা গিরগিটির মতো রং বদলে নিজেদের ফ্যাসিস্টবিরোধী বলে প্রমাণ করতে ব্যস্ত। এমনটাই ঘটছে দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রপথিক সমাজসেবা অধিদপ্তরে। বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে অতিরিক্ত পরিচালক সাজ্জাদুল ইসলামকে ঘিরে।

 

এই কর্মকর্তা ২০০৯ থেকে '২৪-এর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের আগের দিন পর্যন্ত ছিলেন আওয়ামী সরকারের তল্পিবাহক। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক গাজী নুরুল কবীরের অত্যন্ত আস্থাভাজন ও ঘরোয়া আড্ডার বিশ্বস্ত পার্টনার এই কর্মকর্তা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তিতে কাজ করেছেন। এরপর দীর্ঘসময় ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের সদর কার্যালয়ের গবেষণা, মূল্যায়ন ও প্রকাশনা শাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখার উপপরিচালক। তৎকালীন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশীর্বাদে বাগিয়ে নেন প্রকল্প পরিচালকের পদ। মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে ভ্রমণ করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের শেষ দিকে সমাজসেবা অফিসার্স ব্যাচ ২০০০-এর সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী আনুগত্য প্রমাণ করতে তিনি নিজ উদ্যোগে পুরো কমিটি সহযোগে শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ছুটে যান এবং কমিটির পক্ষে অশ্রুসিক্ত চোখে শোক বইতে স্বাক্ষর করেন। সমাজকল্যাণ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাজন সাজ্জাদুল ইসলাম নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি পোস্ট করে তাঁর তীব্র আওয়ামী লীগ প্রীতির প্রমাণ দিলেও বর্তমানে সময়ে নিজেকে জাহির করছেন বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরোধী বলয়ের লোক হিসাবে।

 

বর্তমানে তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের অত্যন্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তা। তিনি অধিদপ্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। এমনকি অধিদপ্তরের একটি নীতিনির্ধারণী শাখার উপপরিচালককে প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাঁর রুমে গিয়ে পরামর্শ নিতে দেখা যায়।

 

এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের পরেও থেমে নেই তাঁর আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর পিএস এবং এপিএসের সাথে তিনি নিজের অফিস কক্ষে গোপন মিটিং করেন বলে অভিযোগ আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপপরিচালক এ ব্যাপারে বলেন, "০৫ আগস্টের পরে যেখানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের গণদাবী উঠেছে সেখানে অধিদপ্তরে এ ধরনের লোকজনের আনাগোনা বিপজ্জনক ও দুশ্চিন্তার।"

ক্ষমতার পালাবদল হলেও পুরনো মুখগুলোই বারবার ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় আওয়ামী লীগের আমলে প্রকৃত বঞ্চিত কর্মকর্তারা অবমূল্যায়িত হচ্ছেন বলে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।