Image description

জমিনের অভ্যন্তরে সাধারণত কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তাকে ভূমিকম্প বলে। এ তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। ক্রমে উৎসস্থল থেকে তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই।' (সুরা: ইসরা ৫৯)

 

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেন, ‘কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম ওঠিয়ে নেয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে, হারজ বৃদ্ধি পাবে। (হারজ অর্থ খুনখারাবী) তোমাদের সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে।’ (বুখারি, হাদিস ৯৭৯)

 
কারণ পৃথিবীতে যখন ব্যাপক হারে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অন্যায়-অবিচার ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে, তখন এ জাতি ভূমিকম্পের মুখোমুখি হবে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহ রাসুল সা.। তিনি বলেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে, মদপানের সয়লাব হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস ২২১২)
 
আর ভূমিকম্পের বিভীষিকা কত মারাত্মক, কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানব সকল, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে একটা মারাত্মক ব্যাপার। যে দিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, স্তন্যদায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে আর সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। দৃশ্যত মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত হবে না। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।’ (সুরা: হজ, আয়াত ১-২)
 
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খেয়ানত করা হবে, জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে, জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে নেতা, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে, তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে, মদ পান করা হবে, লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে, এমন সময় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে।’ (তিরমিজি, হাদিস ১৪৪৭)।
 

 

ভূমিকম্পের সময় কী আমল করবেন?

 

রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ দোয়া তিনবার পড়বে সে ভূমি ও আকাশের দুর্যোগ থেকে হেফাজতে থাকবে। এছাড়া যে কোনো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে পড়তে পারেন-  لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন। অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’
 
রাসুল সা. তার উম্মতকে যেকোনো দুর্যোগের সময়, বিপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন। রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ দোয়া তিনবার পড়বে সে ভূমি ও আকাশের দুর্যোগ থেকে হেফাজতে থাকবে।’
 

 

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম। অর্থ: আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।

 

এ ছাড়া দুর্যোগের সময় আরও যে দোয়া পড়তে পারেন। ﺃﻧﺖَ ﻭَﻟِﻴُّﻨَﺎ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟَﻨَﺎ ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨَﺎ ۖ ﻭَﺃَﻧﺖَ ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟْﻐَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ উচ্চারণ: আন্তা ওয়ালিয়্যুনা ফাগফিরলানা ওয়ার হামনা, ওয়া আন্তা খইরুল গফিরিন। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি যে আমাদের রক্ষক-সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন, আমাদের উপর করুনা করুন। তাছাড়া আপনি-ই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী। (সুরা আরাফ আয়াত ১৫৫)
 
 

ষাঁড় যখন শিং নাড়া দেয়, তখন পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়?
গ্রামদেশে একটি কথা প্রচলিত। পুরো পৃথিবী একটি ষাঁড়ের শিংয়ের উপর আছে। ষাঁড় যখন শিং নাড়া দেয় তখন পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়। এটার কোনো ভিত্তি কি ইসলামে আছে?। এটা কি কোনো হাদিস নাকি? ইসলামে এমন কোনো বিষয়ের কোনো ভিত্তি নেই। এমন কথা কোনও হাদিসেও নেই। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. আবু হাইয়ান রহ. একে ভিত্তিহীন ও জাল বলেছেন। (আলমানারুল মুনিফ পৃষ্ঠা ৭৮, আলইসরাঈলিয়্যাত ওয়ালমাওযুআত ৩০৫)