ভোট দিয়ে ঘোষণাপত্রে যথাযথ স্বাক্ষর না থাকলে পোস্টাল ব্যালটের ভোট ‘বাতিল করবে’ রিটার্নিং অফিসার। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটের (আইটি সাপোর্টেড) মাধ্যমে ভোটদানের জন্য নিবন্ধন শুরু হয়েছে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) এ লক্ষ্যে পোস্টাল ভোটিং নিয়ে পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাটির উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের সই করা পরিপত্রে পোস্টাল ভোটিংয়ের নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে।
ভোটদানের নিবন্ধন পদ্ধতি:
(ক) নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রবাসী ভোটার যে দেশ থেকে ভোট দিতে ইচ্ছুক কেবলমাত্র সেই দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে।
(খ) পোস্টাল ব্যালট প্রাপ্তি এবং ভোট প্রদানের জন্য Google Play Store/App Store হতে ‘Postal Vote BD’ মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে হবে।
(গ) ব্যবহারকারী বাংলা/ইংরেজি যেকোনো একটি ভাষা নির্বাচন করে অ্যাপে নিবন্ধনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্দেশাবলি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
(ঘ) আবেদনকারী নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন করবেন। OTP, Liveliness ও NID যাচাইপূর্বক আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
(ঙ) বিদেশে ব্যালট প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে নির্ভুল ঠিকানা প্রদান আবশ্যক।
রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো প্যাকেটে যা থাকবে:
Postal Vote BD মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধিত সব ভোটারের নিকট পর্যায়ক্রমে ব্যালট পেপার পাঠাবে ইসি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত ভোটারদের প্রদত্ত ঠিকানায় নির্বাচন কমিশনের পাঠানো পোস্টাল ব্যালটসহ খাম পাবেন।
খাম পেয়ে পরপরই ভোটার Postal Vote BD মোবাইল অ্যাপে লগইন করে খামের উপর প্রদত্ত QR কোডটি স্ক্যান করবেন। এতে তিনি যে ব্যালট পেপারটি হাতে পেয়েছেন তা সিস্টেমে সনাক্ত হবে।
ভোটাররা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত বহির্গামী খামে একটি পোস্টাল ব্যালট সংবলিত খামের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট পেপার, এক পাশে ভোট প্রদানের নির্দেশাবলি ও অপর পাশে একটি ঘোষণাপত্র সংবলিত একটি পৃথক কাগজ এবং একটি ফেরত খাম পাবেন; যেখানে সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানা মুদ্রিত থাকবে।
ভোট দিয়ে ডাকযোগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে হবে:
(ক) পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়ায় প্রেরিত ব্যালট পেপারে সব প্রতীক মুদ্রিত থাকবে যার প্রতিটি প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘর রয়েছে। ভোট দেওয়ার আগে ভোটাররা নির্দেশনাপত্র পড়ে ঘোষণাপত্রে যথাযথভাবে ব্যালট পেপারের ক্রমিক নং, ভোটারের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করে প্রদত্ত স্থানে স্বাক্ষর করবেন।
নিরক্ষর/অক্ষম ব্যক্তি অন্য একজন বৈধ ভোটারের সাহায্যে এর সংশ্লিষ্ট অংশ পূরণ করে সত্যায়ন করে স্বাক্ষর করবেন। এই ঘোষণাপত্র/সত্যায়নপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ছাড়া ব্যালট পেপারটি বৈধ হিসাবে গণ্য হবে না।
(খ) প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হলে অ্যাপ-এর মাধ্যমে অথবা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট হতে ভোটারগণ অবগত হবেন।
ভোট প্রদানের জন্য ভোটাররা Postal Vote BD মোবাইল অ্যাপে লগইন করে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীদের তালিকা দেখতে পাবেন এবং নির্দেশিকাতে দেওয়া পদ্ধতিতে ব্যালট পেপারে মুদ্রিত প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘরে টিক (✓) চিহ্ন কিংবা ক্রস (×) চিহ্ন দেবেন। Postal Vote BD মোবাইল অ্যাপে ভোটদান পদ্ধতির ভিডিও টিউটোরিয়াল বা ডিজিটাল কনটেন্ট থাকবে।
(গ) পোস্টাল ব্যালট পেপারে ভোটার ভোট চিহ্নিত করার পর শুধুমাত্র ব্যালট পেপারটি ছোট খামে রেখে খামটি বন্ধ করবেন, অতঃপর উক্ত ব্যালট পেপার সম্বলিত খামটি এবং স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রটি রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানা মুদ্রিত খামে প্রবেশ করিয়ে তা বন্ধ করে বন্ধকৃত খামটি ডাকযোগে দ্রুত প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
উভয় খামই সেলফ-অ্যাডহেসিভযুক্ত থাকবে ফলে সেলফ-অ্যাডহেসিভ অংশের উপরিভাগের টেপটি খুলে নিলেই খাম বন্ধ হবে। খামটি পাঠানোর জন্য কোনো ডাক মাশুল প্রেরককে প্রদান করতে হবে না। এটি সরকারের পরিশোধিত থাকবে।
পোস্টাল ভোট গণনা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত প্রাপ্ত পোস্টাল ব্যালট পেপারগুলোই কেবল গণনার আওতায় আসবে।
(ঘ) নির্বাচন কমিশন হতে কেন্দ্রীয়ভাবে পোস্টাল ব্যালট ভোটারের নিকট প্রেরণের পর হতে রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট ফেরত আসা পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়াটির বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যালটের অবস্থান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ভোটারগণও স্ব স্ব মোবাইল হইতে Postal Vote BD মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে নিজ ব্যালটের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
রিটার্নিং অফিসারের ব্যালট গ্রহণ ও সংরক্ষণ:
রিটার্নিং অফিসার ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালটের খামসমূহ প্রাপ্তির পর তার উপর প্রদত্ত QR কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে প্রাপ্ত রেকর্ড রাখবেন, যা পোস্টাল ব্যালট বিতরণ ও প্রাপ্তি তালিকা হিসাবে সফটওয়্যার হতে জেনারেট হবে। সফটওয়্যার হতে জেনারেট করা এই ফরমে রিটার্নিং অফিসার স্বাক্ষর করবেন।
যথাযথ স্বাক্ষরবিহীন ঘোষণাপত্র/ঘোষণাপত্রবিহীন ব্যালটের খাম বাতিল/অবৈধ বলে সংরক্ষণ করবে রিটার্নিং অফিসার। আর যথাযথ স্বাক্ষরযুক্ত ঘোষণাপত্র সম্বলিত ব্যালটের খামগুলো গণনার জন্য আলাদা বাক্সে সংরক্ষণ করা হবে। যা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার নির্ধারিত বাক্সে সংরক্ষণ করবেন।
পোস্টাল ব্যালট পেপার গণনার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি গণনা কক্ষ প্রস্তুত করা হবে। পোস্টাল ভোট গণনার সময় প্রার্থী/নির্বাচনী এজেন্ট/প্রার্থীর প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, পর্যবেক্ষকরা অন্যান্য কেন্দ্রের ন্যায় একই নীতিমালা অনুসরণে উপস্থিত থাকতে পারবেন।
রিটার্নিং অফিসার পোস্টাল ভোট প্রদানের নিমিত্তে ডেভেলপকৃত সফটওয়্যারে লগইন করার পর সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রদত্ত ভোটের সামগ্রিক চিত্র দেখতে/জানতে পারবেন। যে পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রাপ্ত ব্যালট পেপার গণনা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা
(ক) রিটার্নিং অফিসার ব্যালট পেপার সম্বলিত খামগুলো গণনার জন্য বাক্স খুলবেন এবং একের পর এক ব্যালট পেপার সম্বলিত খাম খুলে ব্যালট পেপার বের করবেন। বৈধ ব্যালট পেপারসমূহ প্রার্থীভিত্তিক আলাদা করবেন এবং তা গণনা করবেন;
(খ) যে সমস্ত পোস্টাল ব্যালটে কোন প্রার্থীর অনুকূলে ভোট প্রদান করা হয়েছে তা সঠিক বোঝা না যায় সেগুলো অবৈধ/বাতিল ব্যালট হিসেবে আলাদা করবেন।
(গ) প্রাপ্ত ফলাফল সাধারণ ভোটকেন্দ্রের মতো লিপিবদ্ধ করে এর কপি প্রকাশ করবেন।
(ঘ) পোস্টাল ব্যালট গ্রহণের সময়সীমা অতিক্রান্ত হবার পর যদি কোনো পোস্টাল ব্যালট পেপার সংবলিত খাম রিটার্নিং অফিসারের নিকট পৌঁছায় সেক্ষেত্রে প্রাপ্ত পোস্টাল ব্যালটসমূহ রিটার্নিং অফিসার/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রহণের তারিখ ও সময় উল্লেখসহ স্বাক্ষরপূর্বক সংরক্ষণ করবেন এবং এ সংখ্যা প্রকাশ করবেন;
পোস্টাল ব্যালট পেপার গণনা শেষ হলে অন্যান্য সাধারণ কেন্দ্রের মতো পোস্টাল ব্যালটের ফলাফল ঘোষণা করে সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা সাধারণ ভোটকেন্দ্রের ফলাফলের পাশাপাশি পোস্টাল ব্যালটে প্রাপ্ত ভোটের হিসাব ঘোষণা ও অন্যান্য কেন্দ্রের ফলাফলের সঙ্গে একত্রিকরণ করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করবেন। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রাপ্ত ভোটের হিসাব একীভূত না করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা যাবে না।
শীর্ষনিউজ