ভালো জীবনের আশায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে লিবিয়ায় মানব পাচারকারী মাফিয়াদের গুলিতে নিহত হয়েছেন মাদারীপুরের তিন যুবক।
ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করার সময় সশস্ত্র পাচারকারী চক্র গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। সহযাত্রীদের মাধ্যমে পরিবার জানতে পারে, তিনজনের লাশ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
নিহতরা হলেন— সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের ইমরান খান (২৮), রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দী গ্রামের মুন্না তালুকদার (৩০) ও ঘোষলাকান্দি গ্রামের বায়েজিত শেখ (২৯)।
নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, কিছুদিন আগে ওই তিন যুবকই দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে লিবিয়া যান। স্থানীয় মানব পাচারকারী শিপন খানের মাধ্যমে তাদের এই যাত্রা শুরু হয়।
মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজি মো. তৈয়ব আলীর ছেলে ইমরান খান গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন। অভিযোগ রয়েছে, শিপন খান তাকে সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২২ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাচারকারীরা ইমরানকে আটকে রেখে ধারাবাহিক শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং পরিবারকে চাপ দিয়ে আরও ১৮ লাখ টাকা আদায় করে।
সবশেষে ১ নভেম্বর ইমরানসহ অন্যদের একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তোলা হয়। পরে একটি নির্জন এলাকায় মাফিয়ারা গুলি চালালে ইমরান ঘটনাস্থলেই নিহত হন। মঙ্গলবার তার মৃত্যু সংবাদ পরিবারের কাছে পৌঁছায়।
একই দিনে মুন্না তালুকদার ও বায়েজিত শেখও একই ধরনের গুলিতে নিহত হন। তাদের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়া ছিল প্রায় অভিন্ন। রাজৈরের দুর্গাবদ্দী ও ঘোষলাকান্দি গ্রামের এই দুই যুবকও দালালদের প্রলোভনে পড়ে লিবিয়ায় যান।
তিন যুবকের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারগুলোতে চলছে কান্না ও ক্ষোভ। স্বজনদের অভিযোগ, এসব মৃত্যুর জন্য মানব পাচারকারী চক্রই দায়ী। তারা দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
নিহত মুন্নার বাবা ইমারাত তালুকদার বলেন, ‘ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। দালাল বলেছিল কোনো সমস্যা হবে না। অথচ মাফিয়ারা আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে।’
নিহত ইমরানের বাবা মো. তৈয়ব আলী খান বলেন, ‘মাফিয়ারা আমার ছেলেসহ তিনজনকে গুলি করেছে। আমি এর বিচার চাই।’
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে দালাল শিপনের পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের বাড়িতে তালা ঝুলছে। তবে শিপনের এক স্বজন ফোনে দাবি করেছেন, ‘এ ঘটনায় শিপনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কাউকে জোর করে পাঠানো হয়নি।’
এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। নিহতদের পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানব পাচারকারীরা যেভাবে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে, তা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। দালালদের ছাড় দেওয়া হবে না।’