জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ক্যান্টিনের খাবারে পোকা পাওয়া গেলে তা নিয়ে প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রীসংস্থার নেত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু।
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে ক্যান্টিনের খাবারে (বরবটি-আলু ভাজি) পোকা পেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি শেয়ার করলে তা নিয়ে শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হন ছাত্রীসংস্থার এই নেত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা তাঁর ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) পোকার বিষয় নিয়ে একটি লেখা শেয়ার করলে তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং হলে থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে তাঁর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করতে দেখা যায়।
উম্মে মাবুদা তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন, খাবারে পোকা বিষয়টি নতুন নয়। তবে জুনিয়র একজন শিক্ষার্থী তাঁকে পোকার বিষয়টি জানালে এবং পরদিন মিড থাকায় সে পোস্ট দিতে না পারায় পরদিন মাবুদাকে জানায়। এরপর মাবুদা প্রমাণসাপেক্ষে পোস্টটি শেয়ার করেন। তবে তাৎক্ষণিক তিনি ছাত্রীসংস্থার নেত্রী ইমুর হুমকির মুখে পড়েন।
ছাত্রীসংস্থার এই নেত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু তাঁর মন্তব্য নিয়ে হল প্রভোস্টের কাছে জবাবদিহি করতে বললে তাতে সম্মতি প্রকাশ করেন মাবুদা। তবে ইন্টার্নশিপে থাকায় নির্ধারিত সময়ে সাক্ষাৎ না করতে পারায় বারবার চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন ইমু এবং সর্বশেষ ৬ নভেম্বর সকালে মাবুদার রুমে যান ওই নেত্রী।
প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মাবুদা প্রথমে নিজে খাবার বিষয়ে বললেও পরে তিনি প্রমাণসহ তাঁর জুনিয়রের কথাও জানান। তাতেই আরও বিরক্ত হন ছাত্রীসংস্থার নেত্রী ও খাবারের দায়িত্বে থাকা ফাতেমা।
তিনি বলেন, এমন পোস্ট কেন করলি? আর ভোটের কথা কেন উল্লেখ করছিস? এখনই গিয়ে ক্ষমা চেয়ে এবং তোর আগের পোস্ট ভুল ছিল বলে পোস্ট দিবি। বাজে পোস্ট করে আমার জকসুর ভোট নষ্ট করার কথা ভাবতেছিস নাকি?
উল্লেখ্য, ওই নেত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলে ছাত্রীসংস্থার প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে অভিযোগের কথা সত্য বলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু বলেন, হ্যাঁ, হলের খাবারে প্রায়ই পোকা পাওয়া যায়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরও এমন হয়েছে। তবে সেদিন পোস্টদাতা শিক্ষার্থী ভোটের কথা উল্লেখ করে এবং দুই জায়গায় দুই কথা বলেছিল, তাই বিরক্ত হয়েছি। তবে ওই শিক্ষার্থীও আমাকে থ্রেট করেছে।
অন্যদিকে হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভয়ে তারা মুখ খুলেন না। হল প্রভোস্টের সঙ্গে সম্পর্ক ও দায়িত্বে থাকার কারণে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু। কোনো শিক্ষার্থী অভিযোগ দিলে তিনি ক্যান্টিনে গিয়ে বাবুর্চিদের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ফলে চাইলেও কেউ মুখ খুলতে পারেন না।
পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে উম্মে মাবুদা বলেন, আমার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই, না আমি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। তাহলে আমি কেন তাঁকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করব? আমার পোস্ট তো পাবলিক করা আছে, চাইলে সকলে দেখতে পারে আমি কী লিখেছি। এখন যদি আচরণ এমন হয়, তাহলে ভোটে জিতলে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হবে আমাদের। অন্যায় হলে তার সমালোচনা করাটা কি অপরাধ?
তিনি আরও বলেন, প্রথমত তিনি খাবারের বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন—যে ওই খাবার দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, সেদিন খাবারের ইস্যু সামনে না এনে ভোটকে ফোকাস করলেন। প্রভোস্ট ম্যাডাম কখনো সকাল ৮টায় হলে আসেন না, সেদিন তিনি আসলেন এবং নিউট্রাল থাকার কথা বলে ভোটের ইস্যু সামনে এনে আমাকে কথা শুনালেন। এখানে মিসের কাছে তাঁর আর আমার মধ্যে ভোট কোথা থেকে আসল?
মাবুদার করা পোস্টে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহমত পোষণ করেন এবং ছাত্রীসংস্থার ওই নেত্রীর আচরণকে ‘বাজে পলিটিক্স’ বলে উল্লেখ করেন। একই পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সন্ধী লেখেন, পুরো বিষয়টা খেয়াল করে দেখলাম তাঁর ফোকাস এরিয়াটা খাবার নয়ই। উনি আছেন তাঁর ভোট নিয়ে। আমি যদি ধরিও খাবার সেদিনের না, কিন্তু এমনও না খাবার ভালো হয়। ভালো কিছুকে নষ্ট করার জন্য বলা হয়েছে। বরং পোস্টটা করা হয়েছিল এটা ভেবে যে, যদি পোস্টটায় কোনো পজিটিভ চেঞ্জ আসে। সব বিষয়ে সব জায়গায় নোংরা পলিটিক্সগুলো টেনে এনে আজকে এই অবস্থা, ভালো কিছু করতে গেলে আরও বেশি সমালোচিত হতে হয়।
ভোটের বিষয়ে পক্ষপাতের আভাস পেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা ইমুর একই বিভাগের শিক্ষক ও হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জকসু সামনে রেখে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ইমু যদি তাকে (মাবুদা) ফের পোস্ট করে মাফ চাইতে বলে, তাহলে ইমুকেও মাফ চাইতে হবে। ইমু আমার কাছ থেকে পদার্থবিজ্ঞানের হিসাবে এক্সট্রা সুবিধা পায় না, বরং ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য হিসেবে সে সুযোগ পায়। তবে জকসুতে শিক্ষার্থীরা যাকে চাইবে, সে-ই আসবে।
তিনি আরও বলেন, আমি দ্রুতই নোটিশ দেব। খারাপ কাজ করে থাকলে ইমুকে সেই মেয়ের কাছে মাফ চাইতে হবে। আর হলে বরবটি ও কলমিশাক নিষেধ করেছিলাম, আবার কেন আনা হলো? খাবারের মান গত এক মাস নিম্নমুখী। শুনছি, ইমু হলের মেয়েদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে। এখনই কিছু লেখা পাঠিয়েছে হল থেকে। এ বিষয়ে রোববার বসব এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।
তবে শিক্ষার্থীদের ধারণা, আদৌ কি কোনো সমাধান হবে? নাকি বড় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে চলবে নিরব অত্যাচার?
শীর্ষনিউজ