দেশে বৃষ্টিপাত কমলেও ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানিয়েছেন, চলতি বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। আগামী বছরের জানুয়ারির শেষে কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এই মৃত্যু প্রতিরোধে সরকারের কোনো তৎপরতা দেখছি না। প্রতিরোধযোগ্য হওয়ার পরও এভাবে মৃত্যুর ঘটনা সরকারের চরম ব্যর্থতার নিদর্শন।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি, অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
আক্রান্ত রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ৬২.২৯ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭.৭১ শতাংশ নারী। আক্রান্ত রোগীর অর্ধেকের বয়স ১৬ থেকে ৩৫ বছর, মৃত্যু ৪৫ শতাংশ। আক্রান্ত হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৬৮ জন ও মৃত্যু হয়েছে ১৩৮ জনের। এদিকে ১৫ বছরের কম বয়সে আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ৯১০ জন বা ১৬.৮৭ শতাংশ। এই বয়সে মৃত্যু হয়েছে ১৪.৯৮ শতাংশ বা ৪৬ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে
আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে তিন হাজার ২৪১ জন। এর মধ্যে দুই হাজার ১৭৬ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে এক হাজার ১৫৫ জন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মশাবাহিত রোগবিষয়ক গবেষক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে জানান, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাঁদের হাতে তাঁরা দায়িত্ব পালনের বিষয় নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত। আবার অনেকে দায়িত্ব পালন করছেন না, প্রচারণাও নেই। এ মুহূর্তে করণীয় হলো হটস্পট ম্যানেজমেন্ট (এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়া)। নিয়ন্ত্রণপ্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণকেও সম্পৃক্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রতিটি বাড়ির চতুর্দিকে ফগিং করে উড়ন্ত মশা মারা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনোভাবেই ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশাটি অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়িয়েছে ৬৩ জেলায়। আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি হয়েছে ঢাকা মহানগরে। গতকাল পর্যন্ত ২২ হাজার ৫২৮ জন আক্রান্ত ও ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ১৮ হাজার ১৩৬ জন আক্রান্ত ও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একক জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি, আট হাজার ৮১৫ জন আক্রান্ত হয়েছে বরগুনায় এবং মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। জয়পুরহাটে এখনো কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।