Image description
মিডিয়া ওয়াচ

বাংলাদেশের মূলধারার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার গলায়’ জুতার মালা পরিয়েছে। ৫ নভেম্বর বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে মিডিয়া আউটলেটগুলোর সংবাদ শিরোনামে জনৈক মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরানোর এই ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনাটির সূত্রপাত যেভাবে:

৫ নভেম্বর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা এক বৃদ্ধের দুই হাত পেছন দিকে নিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা। কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে ঘিরে আছেন। একজন একটি জুতার মালা পরিয়ে দেন বৃদ্ধের গলায়। এ সময় বৃদ্ধকে নিশ্চুপ দেখা যায়।

ঘটনাটি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের। বৃদ্ধার নাম আব্দুল করিম (৭৬)।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আব্দুল করিম প্রতিবেশি এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী কিশোরীকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই মেয়ের চিৎকারে স্থানীয়রা জড়ো হন। এরপর বৃদ্ধাকে একজন ‘যৌন নিপীড়ক’ হিসেবে গাছে বেঁধে গলায় জুতার মালা পরিয়ে মারধর এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করেন। মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ময়মনসিংহ জেলা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বৃদ্ধকে।

অর্থাৎ, জুতার মালা পরানোর কারণ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ওঠা ‘যৌন নিপীড়ন’ বা অপরাধী হওয়ার অভিযোগ। ঘটনাচক্রে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় মানুষজন তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ করতে যাওয়ার কারণে’ জুতার মালা পরায়নি। কিন্তু বেশ কয়েকটি মূলধারার সংবাদমাধ্যম ঘটনাটি খবর দিতে গিয়ে শিরোনাম করেছে, “মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ”।

শিরোনামগুলো পড়লে পাঠকের কাছে মনে হবে, মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপরাধে ওই বৃদ্ধের গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তিনি অনেক বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এলাকায় বসবাস করলেও আগে কখনও তার গলায় জুতার মালা পরানো হয়নি। বরং সম্প্রতি যে মালাটি পরানো হয়েছে তার উপলক্ষ্য হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা, ’মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া’ নয়।

স্থানীয়রা যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণে জুতার মালা পরায়নি, পরিয়েছে ধর্ষণের মতো অপরাধের অভিযোগের কারণে। কিন্তু মিডিয়ার একাংশ খবরটির ফ্রেইমিং এমনভাবে করেছে যাতে, মনে হবে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণে মালাটি পরানো হয়েছে। ফলে, বিষয়টিকে একটু ভিন্নভাবে বলা যায়, প্রকৃতপক্ষে মিডিয়াই ’মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে ওই বৃদ্ধের গলায় জুতার মালাটি পরিয়েছে।

এলাকাবাসী ‘যৌন নিপীড়কের গলায়’ জুতা পরালেও বিডিনিউজ তাদের শিরোনামে মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতা পরিয়েছে

এলাকাবাসী ‘যৌন নিপীড়কের গলায়’ জুতা পরালেও বিডিনিউজ তাদের শিরোনামে মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতা পরিয়েছে

‘মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা’ পরিয়েছে মূলত যে সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের শিরোনামগুলো নিচে দেয়া হলো:

বিডিনিউজ: “মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ”

সমকাল: “গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে গাছে বেঁধে রাখল মুক্তিযোদ্ধাকে”

কালের কন্ঠ: “গফরগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ”

মানবকন্ঠ: “গফরগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ”

আরটিভি: “ময়মনসিংহে বৃদ্ধকে গাছে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ, যা জানা যাচ্ছে”

বাংলাদেশ জার্নাল: “মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ”।

জাগো নিউজ: “বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে-জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ”।

প্রতিদিনের বাংলাদেশ: “গাছে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত”

সময়ের আলো: “যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা”

এদের মধ্যে কেউ কেউ ইন্ট্রোতে যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গটি আনলেও কেউ কেউ আবার পুরো রিপোর্টেই যৌন নিপীড়নের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ এই রিপোর্ট লেখার সময় দেখা গেছে তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে ‘যৌন নিপীড়ন’ প্রসঙ্গটি যোগ করেছে সংশোধন করে। আবার কেউ এখনও যোগ করেনি।