জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি, না হলে দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে চলে যেতে পারে। এমন মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না গেলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জুলাই সনদ প্রণয়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট। এর মধ্যে ২৫টি দল সনদে স্বাক্ষর করেছে। তবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অনেক দল আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায়নি।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সনদটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত হলেও এর বাস্তবায়ন জরুরি। তা না হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুখোমুখি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন, যেসব বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হওয়া দরকার এবং আমি আশাবাদী যে তা হবে। না হলে এখনকার পোস্ট-আপরাইজিং সময়ে দলগুলো একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ সাহান বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, কিংবা এখানে থাকা নোট অব ডিসেন্টগুলোর সমাধান কীভাবে হবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এখনো কোনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারিনি। এটি আমার কাছে কোনো ঐক্যের প্রতীক মনে হচ্ছে না। বরং যদি আমরা দ্রুত মতৈক্যে না পৌঁছাই, তাহলে এখানে ভাঙাগড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
তবে দলগুলোর বর্তমান অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না গেলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন এই দুই বিশ্লেষক। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সম্পর্কে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করার তাগিদও দেন তারা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন, দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিকভাবে মোতায়েন, অন্যটি প্রশাসনের যথাযথ পুনর্বিন্যাস। নির্বাচনের প্রস্তুতি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, নির্বাচনের দিন সবাই দায়িত্ব পালন করবে কিনা, এ বিষয়ে সরকারের একটি স্পষ্ট কাঠামো থাকা উচিত। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না নিলে নির্বাচনে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ সাহান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত দেখছি, জামায়াতে ইসলামী বলছে তাদের দাবিগুলো না মানা হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করবে। এই অবস্থান কতদূর পর্যন্ত তারা নেবে, সেটি জামায়াতের সিদ্ধান্ত। তবে যদি তারা ব্যাকট্র্যাক করতে দেরি করে ফেলে, তাহলে তা নতুন এক অস্থিরতার সম্ভাবনা তৈরি করবে। আর আমরা জানি, আগের সরকারের বিভিন্ন ইন্টারেস্ট গ্রুপ তখন এর সুযোগ নিতে পারে।
এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।