
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মনোনয়নের জন্য সেরা প্রার্থী খুঁজছে দলগুলো। এরই মধ্যে জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে জুলাই বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। এখনো পর্যন্ত প্রার্থী বাছাই শুরু করেনি দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনি প্রস্তুতি নেওয়ার এই শেষ সময়ে এসে এনসিপিকে লড়তে হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা নিয়ে। এদিকে পছন্দের দলীয় প্রতীক শাপলা নিয়ে নির্বাচন কমিশন-ইসির সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সব মিলিয়ে আট মাস বয়সি তরুণ রাজনৈতিক দলটির জন্য ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে সমস্যা তত প্রকট হচ্ছে।
কোন প্রক্রিয়ায় এবং কবে থেকে সংসদীয় আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থী বাছাই শুরু হবে তা নিয়ে দলের মধ্যে এখনো কোনো আলোচনা শুরু হয়নি। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ব্যক্তি উদ্যোগে নিজ নিজ আসনে দলের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত ও ইসির নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে কাক্সিক্ষত দলীয় প্রতীক হাতে পেলে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করবেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি দলটির সতর্ক দৃষ্টি থাকবে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিতের দিকেও। এসব বিষয় বাস্তবায়নে প্রয়োজনে রাজপথের কর্মসূচিতে যাওয়ারও ইঙ্গিত দেন তারা। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নতুন সংবিধান এবং টেকসই সংস্কার বাস্তবায়নের কমিটমেন্ট নিয়ে আমরা রাজনীতিতে এসেছি। নির্বাচনি প্রস্তুতি নেওয়ার আগে সংস্কারের আকাক্সক্ষা থেকে তৈরি হওয়া জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এটি যেন যথাযথ গুরুত্ব এবং মনোযোগ পায় সেদিকটি লক্ষ্য রেখে সব দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সময় যেহেতু চলে আসছে খুব দ্রুতই আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। ফলে নির্বাচনে যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা, সেই বিষয়ে আমরা দৃষ্টি রাখছি। বিশেষ করে সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কীভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যে কমিটি সেটি ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, কীভাবে নিয়োগগুলো হচ্ছে, পক্ষপাত হচ্ছে কি না, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন বা বদলি হচ্ছে কি না এ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এদিকে, নির্বাচন কমিশন-ইসিতে এনসিপির দলীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়া আটকে আছে পছন্দের প্রতীক ‘শাপলা’র কারণে। ইসি সূত্র বলছে, শাপলার দাবিতে অনড় থাকা এনসিপির ভাগ্যে শাপলা জুটছে না। চলতি সপ্তাহেই দলটিকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অন্য কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ দেবে ইসি। তবে শাপলা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণে রাজি নয় এনসিপি। প্রয়োজনে রাজপথের লড়াইয়ে নামার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন দলটির নেতারা। শাপলা নিয়ে ইসি আর এনসিপির এমন মুখোমুখি অবস্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে ইঙ্গিত দিচ্ছে অস্থিরতার। সম্প্রতি দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম ইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি ‘শাপলা’ এবং শাপলাই হবে এনসিপির মার্কা। সেই মার্কা নিয়ে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি গায়ের জোরে বা অন্য কারও প্রেসক্রিপশনে কোনো সিদ্ধান্তে যায় তাহলে তার প্রতিবাদ আমাদের জানাতেই হবে। আমাদের যদি এভাবে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টা করা হয় তাহলে অবশ্যই রাজপথই আমাদের একমাত্র জায়গা হবে। কিন্তু আমরা এটা চাই না।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইসির যে প্রতীক তালিকা সেখানে রাজনৈতিক কোনো প্রতীক নাই। এখন এই তালিকা থেকেই যদি তাদের ইচ্ছা মতো কোনো একটি প্রতীক আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয় তবে সেটি মেনে নেওয়ারও কোনো কারণ নেই। যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া ইসি যদি এটি করে তবে তাদের স্বৈরতান্ত্রিক যে চরিত্র সেটি আরও প্রকট হয়ে উঠবে। শাপলা পাওয়ার জন্য এনসিপির যে রাজনৈতিক লড়াই, সেটি চলমান থাকবে।
দলের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দীন সিফাত বলেন, যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিয়ে শাপলা না দেওয়াটা স্রেফ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার ধান্দা। এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। প্রথম দিন থেকেই এরা কারও প্রেসক্রিপশনে আমাদের সঙ্গে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এই সংকটের কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হলে এর দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।