
বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষকরা।
আন্দোলন সফল করতে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। সিরাজগঞ্জ, কামারখন্দসহ বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্ন ভিন্ন বাসে শিক্ষকরা যাত্রা করছেন। প্রত্যেক দলে ৫০ থেকে ৫৫ জন শিক্ষক রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিন সকালে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘সকল শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠন এবং স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ও অন্যান্য সমিতির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি অব্যাহতভাবে শিক্ষক-কর্মচারী পাঠিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করুন।’
এর আগে, বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দেন, “আমরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছি, কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে কোনো সংঘাত চাই না। আমাদের আবেগ, শ্রম, ঘাম, সব কিছু জড়িয়ে আছে এই আন্দোলনে। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেই আন্দোলন সফল করব।”
এর আগে, দুপুর ২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে পৌঁছান শিক্ষকরা। সেখানে তারা ‘২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ও তিন দফা দাবিতে’ অবরোধ (ব্লকেড) কর্মসূচি পালন করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ থাকায় আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দিনভর শিক্ষকরা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দেন ‘বাড়িভাড়া চাই ২০ শতাংশ’, ‘মেডিকেল ভাতা চাই ১৫০০ টাকা’। আন্দোলনকারীরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ও আন্দোলন চলবে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) আন্দোলনের তৃতীয় দিনে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। সোমবার তারা ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করেন। গত রোববার প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থানকালে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকেই সারাদেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষক নেতারা জানান, “মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা—এই তিন দাবির প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেবেন না।”
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এখনো শতাধিক শিক্ষক অবস্থান করছেন। তারা খোলা আকাশের নিচে চট বিছিয়ে রাত কাটাচ্ছেন; কেউ কেউ ব্যানার মাথার নিচে দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাদের দাবি, ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
অন্যদিকে, সারাদেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছেন না। তারা বিদ্যালয়ের আঙিনা, শিক্ষক লাউঞ্জ বা অফিসকক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষকরা আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন।