
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন। কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধেও তিনি রেখেছেন সফলতার স্বাক্ষর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পান তিনি। পরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। মানিয়ে নিতে না পেরে নোবিপ্রবি ছেড়ে চলে আসেন তিনি।
দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। নগরীর কালিয়াজুরির একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনীতি-শান্তি হলেও তার আবাসিকতা ছিল।
ব্যক্তিগত জীবনে সুমাইয়া অনেক শান্ত ও ভদ্র প্রকৃতির মেয়ে ছিলেন। প্রতিবেশীরা জানান, এই যুগে এমন নম্র ভদ্র মেয়ে পাওয়া দুষ্কর।
সুমাইয়ার পরিবার যে বাসায় ভাড়া থাকতেন ওই বিল্ডিংয়ের নিচতলায় হাতেখড়ি আনন্দ পাঠশালা নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কামরুন নাহার পলিন বলেন, ওরা আমাদের স্কুল ভবনের দোতলায় ভাড়া থাকত। অনেক ভালো মেয়ে ছিল সুমাইয়া। নিচের দিকে তাকিয়ে যে হেঁটে যেত কোনোদিন স্কুলের দিকে তাকায়নি। আমাদেরকে দেখলেই সালাম দিত।
প্রতিবেশী আনিসুল ইসলাম রানা বলেন, ওরা অনেক ভালো মানুষ। ওদের কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না। ওরা অনেক চুপচাপ স্বভাবের। ছেলেগুলোও নম্র ভদ্র।
বাসার সামনের হেলাল স্টোরের মালিক বলেন, ওদের বাবা বেঁচে থাকার সময় কোনোদিন ওরা আমার দোকানে আসেনি। বাবা মারা যাওয়ার পর মা-মেয়ে আসত। মেয়েটা অনেক ভদ্র ছিল। কোনোদিন বোরকা আর হিজাব ছাড়া আমার দোকানে আসেনি। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেও আমার দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে গিয়েছিল।
সুমাইয়াদের বাসার পেছনে গরুর খামার রয়েছে। সেখানকার একজন পরিচর্যাকারী বলেন, এই বাসার ওরা অনেক ভালো মানুষ। কোনোদিন তাদেরকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুনিনি।
সুমাইয়াকে প্রায় তিন বছর বাসায় গিয়ে পড়িয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অভিজিৎ রায়। তিনি বলেন, সুমাইয়া অনেক ভালো মেয়ে ছিল। ওর মৃত্যু আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। সে দুনিয়ায় নেই এটা চিন্তা করলেই আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার কালিয়াজুরি এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে কুবি শিক্ষার্থী ও তার মায়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন সন্ধ্যায় মোবারক হোসেন নামের একজন কবিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধর্ষণের সময় দেখে ফেলায় সুমাইয়ার মাকে এবং ধর্ষণের পর সুমাইয়াকে হত্যা করেছেন বলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন মোবারক। গতকাল এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিতের দাবিতে নগরীর পূবালী চত্ত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করে কুবি শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গনে যায়। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেয় তারা।