Image description

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহ্ আলম মো. আক্তারুল ইসলাম। অধস্তন পুলিশ সদস্যদের আখতারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘সরকারি বেতন-রেশন খাস না, গুলি করবি না কেন?’

চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডে আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রোববার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য কনস্টেবল অজয় ঘোষ জবানবন্দিতে এডিসির কথাটি উল্লেখ করেন।

অজয় গত বছরের ৫ আগস্ট আন্দোলন দমনে রাজধানীর চানখাঁরপুলে অন্যান্য পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ডিউটি করছিলেন। তবে তিনি সিনিয়রদের নির্দেশ উপেক্ষা করে গুলি করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা চাইনিজ রাইফেল ও ৪০ রাউন্ড গুলি কেড়ে নিয়ে কনস্টেবল সুজনকে দেন এডিসি আক্তারুল। এ সময় কনস্টেবল সুজন, ইমাজ, নাসিরুল-ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে ৬-৭ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

এদিকে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দির পর কনস্টেবল অজয় ঘোষকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। জেরার জবাবে অজয় বলেন, রাইফেলের একটি গুলিতে একটি জীবন যাবে, এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার (সিনিয়র অফিসার) নির্দেশ ছিল। কিন্তু আমি তা মানিনি। আমি গুলিও করিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তার সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

জবানবন্দিতে অজয় ঘোষ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমরা এডিসি আক্তারুল স্যারের নেতৃত্বে শহীদ মিনার এলাকায় যাই। সেখানে এডিসি আক্তার স্যারের নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা ফায়ার করে ছত্রভঙ্গ করা হয়। সকাল ১০টার দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের পাশে চানখাঁরপুল চৌরাস্তার মোড়ে আমরা অবস্থান নেই। অলিগলিতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার ভিড় ছিল। তারা শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আমার নামে একটা চাইনিজ রাইফেল ও ৪০ রাউন্ড গুলি ইস্যু করা ছিল। যা আমার সঙ্গে ছিল। এডিসি আক্তার স্যার আমাদের সবাইকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেন। আমি গুলি করতে চাইনি। এডিসি আক্তার স্যার আমাকে ‘বাইনচোদ, কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালাগাল করেন। আরও বলেন, সরকারি বেতন-রেশন খাস না, গুলি করবি না কেন?’

তিনি বলেন, এডিসি আক্তার স্যার আমার হাতে থাকা চাইনিজ রাইফেল ও ৪০ রাউন্ড গুলি কেড়ে নিয়ে কনস্টেবল সুজনের হাতে দেন। সুজনের হাতে থাকা ঢাল-লাঠি আমার হাতে দেন। কনস্টেবল সুজন, ইমাজ, নাসিরুল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, নাজিমউদ্দিন রোড, নবাবকাটারা, বকশীবাজার মোড়ে অবস্থানরত ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে তাদের গুলি করতে দেখি। পরে জানতে পারি সেখানে ৬-৭ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে জানতে পারি, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তখন আমরা চানখাঁরপুল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে শাহবাগ থানার পেছন হয়ে থানায় প্রবেশ করি।

অজয় আরও বলেন, আমি কনস্টেবল সুজনকে খুঁজে বের করে তার কাছে থাকা আমার নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র নিয়ে শাহবাগ থানায় জমা দেই। ১৮ রাউন্ড গুলিও জমা দেই। কনস্টেবল সুজন জানায়, বাকি ২২ রাউন্ড গুলি সে এডিসি আক্তার স্যারের নির্দেশে ফায়ার করেছে। সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে সিভিল পোশাক পরে থানার পেছন দিয়ে বের হয়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মিশে আমার গ্রামের বাড়ি ধামরাই চলে যাই। আসামি সুজন, ইমাজ এবং নাসিরুল আজকে কাঠগড়ায় উপস্থিত আছে। এছাড়াও ইনসপেক্টর আরশাদ স্যারও কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন।

এদিন কনস্টেবল অজয় ঘোষ ছাড়াও মামলায় আরও দুজন সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সৌরভ আহমেদ ও আরেক এপিবিএন সদস্য কনস্টেবল আব্দুর রহমান। এই নিয়ে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের মামলায় ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলো। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আদালত। বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এদিন ধার্য করেন। অন্য সদস্য হলেন-অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ।