Image description

সংবিধানে পিআর পদ্ধতিনেই মর্মে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হবে বলে সংবিধানে লেখা আছে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, তা লেখা নেই। তাই প্রচলিত পদ্ধতিও যেমন লেখা নেই, তেমনি প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিও লেখা নেই। এই দুটি প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করে ফয়সালা হওয়া উচিত। তা না করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এক তরফাভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা অন্যায় হয়েছে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

পাঁচ দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। দাবিগুলো হলো-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা

এসব দাবি আদায়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ডা. তাহের। কর্মসূচি হলো-১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা/উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল

এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি জানান ডা. তাহের।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আন্দোলনের ৫-দফা গণদাবী তুলে ধরা হলো।

ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সঙ্গে দু/একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুতি করেছেন। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে। জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। আমরা মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

জামায়াত নেতা ডা.তাহের বলেন, আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে ‘পিআর’ পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ৩১ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৫ টি দল পিআরে একমত। অনেকে উচ্চকক্ষের পক্ষে, আমরা সহ কয়েকটি দল উভয়কক্ষে পিআরের পক্ষে।

তিনি বলেন, পিআরের পক্ষে থাকা সব দলের সঙ্গেই আমরা আলোচনা করছি। আমরা এখনো সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছি। যদি সরকার এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারে তাহলে জনগণের পক্সে আমরা মাঠে প্রতিনিধিত্ব করবো।

ডা. তাহের বলেন, যেহেতু সবার দাবি এক, সেহেতু যার যার মত করে বিভিন্ন দল আন্দোলনে নামবে। তবে এখনো যুগপতের বিষয়ে কিছু নির্ধারণ হয়নি। নির্বাচনি জোটের বিষয়ও এখন আসছে না। তবে জুলাইয়ের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করা যায় কিনা-সে বিষয়ে আলোচনা করছি। তবে যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়ার কোন শঙ্কা আছে বলে আমরা মনে করি না।

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, বিএনপি নেতার বক্তব্য অনুযায়ী ১৬ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি জামায়াতের হলে বাকিগুলো কাদের? জামায়াতের কেউ ভিসি হলে তার যোগ্যতায় হয়েছে। এসব বিতর্ক করে সমাধান পাওয়া যাবে না।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আবদুল হালিম ও অ্যাডভোকেট মোয়াজেম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব ও মোবারক হোমাইন, ঢাকা উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মূসা, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।