Image description

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

সোমবার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণে তিনি বলেন, ‘আমাকে আয়নাঘরে নিয়ে চোখ বাঁধা হয় এবং হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। তারপর অন্ধকার সেলে গারদের শিকের সাথে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিলো। টিএফআই সেলে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করা না হলেও বিভিন্ন উপায়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় আমি পাশের সেলগুলোতে কয়েদিদের আর্তনাদ শুনতে পাই। তাদের এক একজনকে সেল থেকে নিয়ে নির্যাতন করে আবার সেলে ফেলে রাখা হতো। সেখানে অধিকাংশরাই আলেমা শ্রেণীর মানুষ ছিলেন। আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টর্চার রুমে নিয়ে যাওয়া হতো। হয়তো মানসিক টর্চার করবার উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণের জন্য আমার চোখ খুলে দেওয়া হতো। আমি সেখানে টর্চারের নানা রকম যন্ত্রপাতি দেখতে পাই।

 

যেমন ছোট ছোট হাতুড়ি, করাত এবং নখ তোলার জন্য প্লায়ার্স দেয়ালে টাংগানো ছিলো। এখানে আমাকে এক দিন রাখা হয়েছিলো। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় ক্যান্টনমেন্ট থানায়। সেখানে রাত ১.০০টার দিকে পুরো থানার বাতি নিভিয়ে দিয়ে ৫/৬ জন আততায়ী আমার সেলে প্রবেশ করে আমাকে বিবস্ত্র করে। আমার পরনে শুধু আন্ডারওয়্যার ছিলো। একটা জাম্পস্যুট পরিয়ে আমার দুই হাত বেঁধে ফেলা হয়। আততায়ীরা আমার উপরে টর্চার শুরু করলে খুব দ্রুত আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরলে আমি দেখতে পাই আমাকে সেল থেকে ডিউটি অফিসারের রুমে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। আমার সমস্ত শরীর পানিতে ভেজা ছিলো। ধারণা করতে পারি আমার জ্ঞান ফিরানোর জন্য শরীরে পানি ঢালা হয়।

টিএফআই সেল এবং ক্যান্টনমেন্ট থানার ঘটনা আমার লেখা ‘জেল থেকে জেলে’ নামের বইতে বিস্তারিত লিখেছি। বইটি ২০১২ সালের একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছিলো। ২০১৩ সালে আমি দ্বিতীয় দফায় গ্রেপ্তার হলে আমাকে ডিবিতে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দফায় আমি ৩৯ দিন রিমান্ডে ছিলাম। দ্বিতীয় দফার রিমান্ডের সময় আমার সাথে তৎকালীন ছাত্র শিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সাথে সাক্ষাত হয়। এর আগে আমি দেলোয়ার হোসেনকে চিনতাম না। দুই দিন আমার সাথে দেলোয়ার হোসেন ডিবির একই গারদে ছিলো। সেই সময় আমি দেলোয়ারের উপর ভয়াবহ টর্চার দেখতে পেয়েছি। তাকে সন্ধ্যার পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে সেল থেকে নিয়ে যাওয়া হতো। মধ্য রাতে ২/৩ জন পুলিশ তাকে বহন করে আবার গারদে ফিরিয়ে নিয়ে আসতো। টেনে নিয়ে আসার পর সে শুধু যন্ত্রণায় কারাতো, কথা বলতে পারতো না, উঠে দাঁড়ানোর কোনো শক্তি থাকতো না। দুই দিন পর ডিবি কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে যে, আমার সাথে দেলোয়ারকে রাখলে ভবিষ্যতে আমি তার উপর নির্যাতনের সকল কাহিনী প্রকাশ করবো। সেজন্য তাকে আমার গারদ থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এবং দেলোয়ার শেখ হাসিনার ১৫ বছর ব্যাপী জুলুমের প্রত্যক্ষ উদাহরণ।’