Image description

রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়ায় গাড়িতে করে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান রিমান্ডে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এনায়েত করিমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে শনিবার ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আজ ওই রিমান্ডের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে সকালে আদালতে হাজির করে তাঁকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই আবু হানিফ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিকেলে শুনানি শেষে আদালত দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অন্যদিকে ৫৪ ধারার মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নিয়মিত মামলা হওয়ায় তাঁকে ৫৪ ধারার মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়া এলাকায় একটি প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় এনায়েত করিমকে। এ সময় পুলিশ তাঁর গাড়ি থামালে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন।

পুলিশ জানায়, তাঁর কাছ থেকে দুটি আইফোন জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে ফোন থেকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে গোপন তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাঁকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে শনিবার তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

এনায়েত করিমের মোবাইল এবং তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে রবিবার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলার অভিযোগে বলা হয়, এনায়েত করিমকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তিনি ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে এই ব্যক্তি আরও জানান, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নিমিত্তে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান।

তিনি ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন। পরে গুলশানের বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করতে থাকেন। এরই মধ্যে তিনি সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমেরিকান সরকার হতাশ।

আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় রহিত করবেন বলে জানান আসামি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সেনাবাহিনী-সমর্থিত নতুন জাতীয় সরকার অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। নতুন এই সরকারে কারা অংশ নেবেন এবং সরকারপ্রধান কে হবেন, তা আমেরিকা নির্ধারণ করে দেবে বলে জানান। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে তাঁকে নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতেন বলে জানান। এনায়েত করিম বাংলাদেশে এসে জননিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সরকার উৎখাতের জন্য আর কারা কারা জড়িত, সেই তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। কেননা, তার ফোনে সরকার উৎখাতের বিস্ফোরক তথ্য পাওয়া গেছে।