
সারা দেশে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। জ্বরের তীব্রতা, শরীরে ব্যথায় কাহিল অবস্থায় রোগীরা। জ্বর এলে ডেঙ্গু টেস্ট করছেন। ডেঙ্গু নেগেটিভ হলে চিকুনগুনিয়া টেস্ট করছেন নয়তো করোনা। টেস্টে এসব ভাইরাস নেগেটিভ এলে মৌসুমি জ্বর ধরে নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড ও মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ। চার থেকে পাঁচ দিনের জ্বর নিয়ে আসছেন রোগীরা। একজনের জ্বর হলে পরিবারের অন্যরাও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গও প্রায় একই রকম। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ ভাইরাস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বরে। তাদের পরামর্শ, হালকা উপসর্গ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে বিশ্রাম নিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মাস্ক পরা ও গরম তরল খাবার খেতে হবে। রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাব্বির হোসেন বলেন, গত রবিবার রাতে হঠাৎ ভীষণ জ্বর আসে। থার্মোমিটারে শরীরের তাপমাত্রা উঠেছিল ১০৩ ডিগ্রিতে, সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা। যেহেতু ডেঙ্গুর মৌসুম তাই প্রথমেই ডেঙ্গু টেস্ট করি। টেস্টে ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে কিন্তু জ্বর কমে না। তিন দিন পর জ্বর, শরীর ব্যথা কিছুটা কমেছে। কিন্তু শরীর ভীষণ দুর্বল, চলাফেরা করার মতো শক্তি নেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের রোগীর রেজিস্টার সূত্রে জানা যায়, ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আউটডোরে চলতি মাসের ২৪ দিনে ১৫ হাজার ৫৫৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা। এ হাসপাতালে ৭৪ হাজার ২৮০টি বিভিন্ন ভাইরাস জ্বরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ১২ দিনে ৩৭ হাজার ৮৩টি পরীক্ষা করা হয়। দিনপ্রতি গড়ে ৩ হাজার ৯০ জনের পরীক্ষা করা হয়। তবে পরবর্তী ১২ দিনে ৩৭ হাজার ১৯৭টি পরীক্ষা করা হয়। পরের ১২ দিনে দৈনিক ১১৪টি পরীক্ষা বেশি করা হয়েছে। এই দিনগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৯৯টি পরীক্ষা বেশি করা হয়। পরীক্ষার হার বেড়েছে প্রায় ০ দশমিক ৩১ শতাংশ। কেরানীগঞ্জ থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে এসেছিলেন শাহাব আলী।
তিনি বলেন, চার দিন হলো দুই ছেলের জ্বর, বমি, পেটে ব্যথা। প্রথমে ছোট ছেলের জ্বর আসে (৪)। এর পরদিন ভীষণ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে বড় ছেলের। দুই-তিনটা লেপ, কম্বল দিয়েও কাঁপুনি কমানো যাচ্ছে না। এ জন্য দুজনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। লাইনে দাঁড়ানো অধিকাংশ মানুষই জ্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তুষার মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে এখন জ্বর, কাশি, সর্দি নিয়ে বেশি রোগী আসছে। এর মধ্যে একটা অংশ ডেঙ্গু আক্রান্ত। একই পরিবারে কয়েকজন জ্বরে আক্রান্ত হলে করোনা সন্দেহ করা হয়। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাসেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বরের সঙ্গে গায়ে র্যাশ ওঠার উপসর্গ থাকে। তাই জ্বর এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার, স্যুপ, টাটকা ফলের রস সেবন করলে উপকার হবে।’ শুধু ঢামেক হাসপাতাল নয় রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, চিকিৎসকদের চেম্বারে জ্বর নিয়ে আসছে মানুষ। এ বছর চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, চলতি জুন মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে রাজধানীতে জ্বর ও উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করাতে আসা ১৭১ জন রোগীর মধ্যে ১৪০ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় ৮২ শতাংশ। সংস্থাটি একে উচ্চ সংক্রমণের স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে চিহ্নিত করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমে এলেও শঙ্কা কমেনি। টেস্ট করালে মিলছে আক্রান্ত রোগী। তাই দুশ্চিন্তা না করে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।