Image description

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই ৬ মাসে শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯ হাজার ৮শ’ ৪৭টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এরমধ্যে ৭ হাজার ৮১২ মামলা এখনো তদন্তাধীন। ডিএমপি’র ৫০টি থানায় দায়ের হওয়া এসব মামলা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতি মাসে গড়ে শুধুমাত্র ৭০টির বেশি চাঁদাবাজিরই মামলা রজু হয়েছে। আর মাসপ্রতি ৪৬টির বেশি দায়ের হয়েছে ছিনতাই মামলা। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ বিবরণী ঘেঁটে এই তথ্যই উঠে এসেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারতপক্ষে সাধারণ মানুষের বেশির ভাগই থানার গেট মাড়ায় না। তাই খাতা-কলমের এই তালিকার বাইরেও অনেক অপরাধ হয়েছে যা লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি।  
বাংলাদেশ পুলিশের ক্রাইম স্ট্যাটিক্স ইন জানুয়ারিতে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গত জানুয়ারি মাসে ৫৪টি ডাকাতি, ৩৬টি খুন, ৭টি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ১২৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ৩১টি অপহরণ, ৬০টি ছিনতাই, ১৪৬টি চুরি ও অন্য আরও ৬৭৯টি অপরাধে মামলা দায়ের হয়েছে। 

এ ছাড়াও অস্ত্র আইনে ১২টি, বিস্ফোরক আইনে ৫টি, মাদক ৫৮৩টি ও ৯টি চোরাচালানের মামলা দায়ের হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৬টি ডাকাতি, ৩৮টি খুন, ৯টি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৪২টি, ১৮টি অপহরণ, ৩৬টি ছিনতাই, ১১৭টি চুরি ও অন্য আরও ৬৩৮টি অপরাধে ঢাকা মেট্রোপলিটনের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়াও ৮টি অস্ত্র আইনে, ১টি বিস্ফোরণ আইনে, ৪৭৪টি মাদক, ৮টি চোরাচালানসহ মোট ১ হাজার ৫৬৬টি অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মার্চ মাসের অপরাধ তালিকায় দেখা গেছে, ৩৮টি  ডাকাতি, ৩৩টি খুন, ১৫টি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ১৬২টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ১৯টি অপহরণ, ৪৩টি ছিনতাই, ১৩৭টি চুরি ও অন্য আরও ৬৯৯টি অপরাধে মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়াও অস্ত্র আইনে ২০টি, বিস্ফোরক আইনে ২টি, মাদক ৫৩৮টি ও ১০টি চোরাচালানসহ মোট ১ হাজার ৭৫৪টি অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে ৩৭টি ডাকাতি, ২৯টি খুন, ১টি দাঙ্গা-হঙ্গামা, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৯১টি, ১৯টি অপহরণ, ৪৮টি ছিনতাই, ১১৮টি চুরি ও অন্য আরও ৫৪০টি অপরাধে ঢাকা মেট্রোপলিটনের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। 

এ ছাড়াও ৫টি অস্ত্র আইনে, ৬টি বিস্ফোরণ আইনে, ৫০৩টি মাদক, ২৪টি চোরাচালানসহ মোট ১ হাজার ৫৪৭টি অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গত মে মাসে ৪০টি ডাকাতি, ৩২টি খুন, ৬টি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ১৮৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ২৫টি অপহরণ, ৫০টি ছিনতাই, ১২৮টি চুরি ও অন্য আরও ৬৩০টি অপরাধের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়াও অস্ত্র আইনে ৪৪টি, বিস্ফোরক আইনে ২টি, মাদক ৫৪৬টি ও ২১টি চোরাচালানসহ মোট ১ হাজার ৭৩৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। সবশেষ গত জুনে ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানায় ৩২টি ডাকাতি, ৪৯টি খুন, ৪টি দাঙ্গা-হঙ্গামা, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৬৮টি, ২০টি অপহরণ, ৫৫টি ছিনতাই, ৯০টি চুরি ও অন্য আরও ৪৫৬টি অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়াও অস্ত্র আইনে ৪৫টি, বিস্ফোরণ আইনে ৪টি, ৫০৫টি মাদক, ১০টি চোরাচালানসহ মোট ১ হাজার ৪৫৬টি অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী এই ৬ মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অন্তত ২৯২টি মামলা হয়েছে ডিএমপি’র বিভিন্ন থানায়। এ ছাড়াও চাঁদাবাজির ঘটনায় ৪১৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। 

এসব বিষয়ে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন সেটা হলো চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় এলেই আমরা তা মামলা হিসাবে রেকর্ড করি। সেই হিসাবে গত ৬ মাস অর্থাৎ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত এই সময়ের সমীকরণে দেখা যায় প্রতি মাসে ডিএমপিতে প্রায় ৭০টির মতো চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়েছে। এখানে শুধুমাত্র এককভাবে চাঁদাবাজি তা না, অন্য কোনো মামলায় চাঁদাবাজির ধারা থাকালেও আমরা সেটাকে চাঁদাবাজি হিসাবে ধরেছি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সবগুলোরই আমরা রহস্য উদ্ঘাটন করেছি। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক চারটি চেকে মোট দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে। 

এ সংক্রান্তে কলাবাগান থানায় পৃথক একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। আমরা মনে করি ডিএমপি’র বর্তমান যেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেটা স্বাভাবিক আছে। এর বাইরে আমাদের যেই পুলিশিং কার্যক্রম তাও চালু রেখেছি। ডিএমপি’র এই মুখপাত্র বলেন, জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মহানগরীতে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২১২টি মোবাইল পেট্রোল টিম, ২০টি ফুট পেট্রোল টিম ও ২৭টি হোন্ডা পেট্রোল টিমসহ গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০টি থানা এলাকায় দুই পালায় ডিএমপি’র ৪৭১টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ৬৬টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। ডিএমপি’র বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ১৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত ১১টি মোবাইল ফোন, একটি বাস ও নগদ ১৩ হাজার ১৮০ টাকাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ৩৩ মামলা রুজু করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই সংকোচ দূর করে সাধারণ মানুষকে থানায় আসার পরামর্শ দেন তিনি।