
গাজীপুরের টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে নিহত ফারিয়া তাসনিম জ্যোতিকে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে চুয়াডাঙ্গার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। দাফনের আগে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় তার আট বছর বয়সী জমজ সন্তানের আহাজারিতে। মায়ের কফিন জড়িয়ে তারা বারবার বলছিল, ‘আম্মু ওঠো’, ‘আম্মু ওঠো’- কিন্তু সেই ডাকের কোনো উত্তর ছিল না।
নিহত ফারিয়া তাসনিম জ্যোতি (৩৬) ছিলেন ঢাকার একটি আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর ওলিউল্লাহ আহাম্মদ বাবলুর মেয়ে।
গত রোববার (২৭ জুলাই) রাতে গাজীপুরের টঙ্গীর হোসেন মার্কেটের পাশে খোলা ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ হন জ্যোতি। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীর শালিকচুড়া বিল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এরপর মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে জ্যোতির নিথর দেহ যখন চুয়াডাঙ্গা শহরের বাগানপাড়ার নিজ বাড়িতে পৌঁছায়, তখন স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর পৌর এলাকার বাগানপাড়া সংলগ্ন পুরাতন জামে মসজিদে জ্যোতির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে শত শত মানুষ-স্বজন, সহকর্মী ও এলাকাবাসী-ভিড় করেন।
নিহতের বড় ভাই শোভন আহাম্মদ বলেন, ‘আমার বোন সংগ্রামী নারী ছিলেন। চাকরি করে দুই সন্তানকে মানুষ করার স্বপ্ন দেখত। এখন ওরা শুধু মাকে খুঁজছে।’
এলাকাবাসীর দাবি, এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং নগর ব্যবস্থাপনার চরম অব্যবস্থাপনার ফসল। তারা বলেন, জনবহুল এলাকায় খোলা ম্যানহোল রাখা কীভাবে সম্ভব? এমন মৃত্যুকে হত্যার শামিল বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ।
এদিকে সচেতন নাগরিকরা বলেন, নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এক মায়ের প্রাণ গেছে। তারা দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে নগরের সকল উন্মুক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ড্রেন ও ম্যানহোল নিরাপদ করতে হবে। একইসঙ্গে জ্যোতির মৃত্যুর ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।