
হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির ধারক-বাহক দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে পাতিত শেখ হাসিনার দোসর সেই মেহের আফরোজ শাওন আবারও মাঠ উত্তপ্তের চেষ্টা করছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একের পর এক বিতর্কিত ও দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসার চেষ্টা তার।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেয় বিতর্কিত অভিনেত্রী শাওন। সেখানে হাসিনার এই দোসর লেখে, ‘‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আসলে কিছুই করে নাই। আপনার দাদা শ্বশুর মাথায় ঠাডা পইড়া মারা গেছেন।’’ এর নিচে সে হ্যাশট্যাগ হিসেবে যুক্ত করেছেন ‘তুই রাজাকার’।
এরআগে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেন ‘শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও মনে হয় এত জঘন্য অপরাধ করে নাই’। আইন উপদেষ্টার এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তার বক্তব্যকে মূলত ব্যঙ্গ করে পোস্টটি দেয় শাওন। যদিও আসিফ নজরুল ওই বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই দুঃখ প্রকাশ করে মন্তব্যটির ব্যাখ্যা স্পষ্ট করেছেন।
পরে ফেসবুকের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে আসিফ নজরুল এক পোস্টে লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার নৃশংসতা অবিশ্বাস্য। লাশ ও আহত মানুষকে আগুনে পোড়ানো, নির্বিচারে নারী-কিশোর-শিশু হত্যা, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে বেসামরিক মানুষ মারা, মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর তরুণকে গুলি করে মারা, হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।’
‘কিন্তু তাই বলে তার নৃশংসতার সঙ্গে একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার তুলনা করা ঠিক হয়নি আমার। দুটোই জঘন্যতম অপরাধ। আমার কথায় যারা ভেবেছেন আমি একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞকে ছোট করে দেখেছি তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি’ বলেন আসিফ নজরুল।
এদিকে, আইন উপদেষ্টার বক্তব্যকে ব্যঙ্গ করে পোস্ট দিয়ে ট্রলের শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগ পন্থি অভিনেত্রী শাওন। অনেকেই তার এই পোস্টে প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে শাওন বুঝাতে চাইছে ২৪’এর গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হওয়া কয়েক হাজার ছাত্রজনতা ‘ঠাডা পইড়া মারা গেছেন’। নেটিজেনরা জবাব দিয়ে আরও বলেছেন, ৭১-এ যেমন পাকিস্তানি নৃশংসতায় মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ২৪-এ খুনি হাসিনার নৃশংসতায়ও হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। শাওন কেবল পাকিস্তানি নৃশংসতার কথা বললেও কৌশলে হাসিনার ভয়াবহ নৃশংসতাকে উপেক্ষা করেছে। আর এনিয়ে কখনও তাকে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। উল্টো এক পোস্টে গণঅভ্যুত্থানকে হাসিনার বিরুদ্ধে মেটিকুলাসলি ডিজাইন বলে মন্তব্য করেছিল সে।
বান্ধবীর পিতা এবং নিজের পিতার চেয়ে বয়সে বড় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে বিয়ে করা শাওন বিতর্কিত ব্যাক্তি হিসেবে চিহ্নিত। জন্মগত ভাবে ইসলাম ধর্মের মানুষ হয়েও সে হিন্দু ধর্মের চেতনা ধারণ করে ব্যাক্তিজীবন যাপন করে। হাসিনা রেজিমে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের পাতানো নির্বাচনে শাওন আওয়ামী লীগের হয়ে দেশের শিল্পী সমাজের লোকজন নিয়ে নৌকার পক্ষ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালায় সে। ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে চেয়ে ব্যর্থ হলেও সে আওয়ামী লীগের মার্কামারা অলিগার্ক ছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের গুলি করার এবং মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। এমনকি হাসিনা রেজিমে আইন শৃংখলা বাহিনীকে ছাত্রজনতার ওপর গুলি ছোঁড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
এরআগে ফেসবুক পেজ থেকে বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত সে। বিশেষ করে, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তার করা একাধিক পোস্ট ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে। সে ‘সময়রেখা’ নামে এক অ্যালবামে নানা ধরণের বিতর্কিত পোস্ট শেয়ার করেছিল, যেগুলোর অনেকগুলো পরবর্তীতে ডিলিট করা হয়।একটি পোস্টে শাওন উল্লেখ করেছিল, ‘বাচ্চারা এত্ত ভয় পেয়েছে?’ যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তবে কিছুক্ষণ পর তিনি পোস্টটি মুছে ফেলে।
এবছর অমর একুশে বইমেলা নিয়েও শাওন একটি পোস্ট দেয়, যা নেটিজেনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তিনি বইমেলার কপিরাইট নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, যা অনেকের মতে অযাচিত ছিল।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি তহুরা আলীর কন্যা অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে অবশ্য সে জামিনে মুক্ত হয়।