
ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক যেন আর সড়ক নেই, রীতিমতো পরিণত হয়েছে জলাশয়ে। কোথাও ধান গাছ রোপণ, আবার কারও হাতে বরশি-এমন দৃশ্য এখন মহাসড়কে নিত্যদিনের চিত্র। ফলে স্থানীয়দের কটাক্ষ, এটি আর মহাসড়ক নয়, যেন এক বিশাল জলাধার!
দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার এই মহাসড়কের মধ্যে প্রায় ৬০০ মিটার একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খানাখন্দ আর পানিদ্ধতায় যানবাহনের গতি থেমে যাচ্ছে বারবার। দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, অটো কিংবা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স কোনোটাই নিরাপদ নয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এই সড়কে অন্তত ১৮৭টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরো ২ জন। গুরুতর আহত হয়েছেন ৮৭ জনেরও বেশি। এছাড়া আরও শতাধিক যাত্রী ও পথচারী আহত হয়েছেন। তথ্যের উৎস ফরিদপুর হাইওয়ে থানা, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্থানীয় একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও সড়ক উন্নয়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। পদ্মা সেতু চালুর পর এই রুটে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে, অথচ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চার লেন প্রকল্পের নামে প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের হাজার হাজার পুরাতন ও মূল্যবান গাছ কেটে লুট করে নেয়া হয়েছে। বন বিভাগের টেন্ডারের আড়ালে কোটি কোটি টাকার গাছ গায়েব হয়ে গেছে চোখের সামনে।
ভুক্তভোগী স্থানীয়দের ভাষ্য, ‘আমরাই বন বিভাগ থেকে চারা এনে রাস্তার পাশে গাছ লাগাইছি। কেটে নিয়ে গেল নেতারা, বন বিভাগের লোকজন, ডিসি অফিসের কর্তারাও মিলে। আমরা তো দেখলাম আর ফাঁকা রইলাম!’ এমন অভিযোগ কামারখালির কফিল, পুকুরিয়ার মজিদ, ভাঙ্গার আরমান, তালমার আয়েশা খাতুন ও মধুখালির কেরবানের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের বাখু-া নামক স্থানে প্রায় ২০০ মিটার, মহিলা রোড এলাকায় ৩০০ মিটার এবং তালমা মোড়ে ১০০ মিটার অংশের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। চলতি সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা যান চলাচলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
পরিবহন চালক জালাল মাতুব্বর ইনকিলাবকে জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যেখানে দেড় ঘণ্টা লাগে, সেখানে ভাঙ্গা গোল চত্বর থেকে ফরিদপুর শহর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পথ যেতে প্রায় একই সময় লাগছে। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে বাধ্য হওয়ায় প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
নগরকান্দা থেকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. জাহাঙ্গীর ইনকিলাবকে জানান, মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে দিনে একাধিকবার তাদের ফরিদপুর আসতে হয়। কিন্তু মহাসড়কের যে অবস্থা, তাতে গাড়ি চালানো কঠিন। নগরকান্দা থেকে ফরিদপুর আসতে যেখানে আগে ৩০ মিনিট লাগত, এখন এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ্ সরদার ইনকিলাবকে জানান, ভাঙ্গা থেকে নদী গবেষণা পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে এবং কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারছেন না। দুর্ঘটনা এড়াতে ছোট গাড়িগুলোর চলাচলের জন্য রাস্তার দু’পাশ প্রশস্ত করে সংস্কারের জন্য ঠিকাদারকে ৯ মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
ফোরলেন প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ভূমি অধিগ্রহণের কাজ করছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ধীরগতিতে চলায় প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোহরাব হোসেন জানান, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে অধিগ্রহণের কাজের অগ্রগতির জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।