
বন্ধুত্বের বাঁধনে বেঁধে আনন্দযাত্রায় সমুদ্রদর্শনে গিয়েছিলেন পাঁচ বন্ধু। কিন্তু কক্সবাজারের হিমছড়ির উত্তাল ঢেউ সেই যাত্রাকে ম্লান করে দিল। সাগরের উত্তাল ঢেউ ইতোমধ্যেই একজনকে কেড়ে নিয়েছে; নিখোঁজ রয়েছেন আরও দু’জন। সূত্রের তথ্য, উদ্ধারকৃত একজনের মরদেহ স্থানীয় জেলেরা পেয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে সমুদ্রে গোসলে নেমে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যান তারা। সকাল থেকে পুলিশ, ডুবুরি ও ফায়ার সার্ভিস এক সঙ্গে কাজ করলেও এখন পর্যন্ত দু’জনের কোনও খোঁজ পায়নি।
জানা গেছে, মৃত শিক্ষার্থীর নাম কে এম সাদমান রহমান সাবাব। তার বাবার নাম কে এম আনিছুর রহমান। তিনি ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা। অন্য দুই নিখোঁজ শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান ও আসিফ আহমেদ। তাদের দুজনের বাড়ি বগুড়ায়।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) গাজী আতাউর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চারজন এবং আরবি বিভাগের একজনসহ মোট ৫ শিক্ষার্থী কক্সবাজারে ঘুরতে যান। রাতে হিমছড়িতে একটি রিসোর্টে অবস্থান করে তারা। এরপর সকালে তিনজন সমুদ্রে গোসলে নামলে ঢেউয়ের তোড়ে তলিয়ে যান তিনজনই। তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে জেলেরা সাবাব নামের ১ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। বাকি দু’জনের এখনও কোনো খোঁজ নেই। আমরা সৈকতে আছি, তাদের উদ্ধারে পুলিশ, ডুবুরি, ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।’
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সাঈদ বিন কামাল চৌধুরী বলেন, তাঁদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। তবে সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় তাঁরা ঠিকভাবে উদ্ধার কাজ করতে পারছে না। কেননা উদ্ধারের জন্য নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থীদের লোকেশন শনাক্ত করতে হবে, যেটা সমুদ্র উত্তাল থাকার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে মৃত উদ্ধার হওয়া সাবাবের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গতকাল রাতে প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী কক্সবাজারে ঘুরতে যায়। তারা নিজ উদ্যোগে সেখানে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সেখানকার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের পরিবারকে জানানো হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের বিভাগের সিনিয়র কয়েকজন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীসহ ৫ জনের মধ্যে ৪ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ বিভাগের। অন্য একজন আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলে থাকেন।
এদিকে প্রিয় সহপাঠীর নিখোঁজ হওয়ার খবরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়জুড়েই, বিশেষ করে শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলে যারা একসাথে থাকতেন, তাদের মধ্যে শোকের আবহ নেমে এসেছে। ক্লাসরুম থেকে শুরু করে হল, সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।