Image description

আদালতের রায়ের পর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার রাস্তা তৈরি হয়েই আছে। রাজনৈতিক দলগুলোরও এ বিষয়ে দ্বিমত নেই, তবে সেই সরকার কেমন হবে, তা নিয়ে আছে মতপার্থক্য।

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দশম দিনের আলোচনা হয়েছে সোমবার।

সংস্কার কমিশনগুলোর দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ আলোচনার প্রথম ধাপে বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে চলছে মৌলিক বিষয়গুলোর আলোচনা। জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষ করে জাতীয় সনদ দেওয়ার কথা রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ গত ২ জুলাই দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। তবে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন, কাঠামোগত বিষয় ও সময়সীমা নিয়ে আলোচনা চলছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৫ সদস্যের ‘অন্তর্বর্তী সরকারের’ সুপারিশ করেছে, যার মেয়াদ হবে ৯০ দিন। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতিও তুলে ধরা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ২০ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে, যার মেয়াদ হবে চার মাস।

এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছিল, গত ১৭ ডিসেম্বর তার কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করে হাই কোর্ট। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার পথ খোলে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আগামী জাতীয় সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, এ রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে যে সংশোধনী আনা হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। তার অর্থ হলো সেই ব্যবস্থা পুর্বহাল হল।

 

আগে কেমন ছিল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয় হয়েছিল তিন দশকেরও বেশি সময় আগে, আরেক সংকটময় সময়ে।

সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাকে সরকারের প্রধান করা হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ওই সময়ে প্রথমে উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করলে সাহাবুদ্দীন আহমদ উপরাষ্ট্রপতি হন। এরপর রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করলে সে পদে বসেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন।

তার অধীনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা বিএনপি বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্য দলীয় সরকারের অধীনে ষষ্ট জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে।

এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে ওই বছরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি।

 

 

সেই বিধান অনুসারে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন হয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে।

১৯৯৬ সালের ক্রয়োদশ সংশোধনী আইন অনুযায়ী দুইভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার সুযোগ ছিল। কোনো কারণে সংসদ ভেঙে দেওয়া হলে তার ১৫ দিনের মধ্যে। এবং সরকারের মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে।

ওই আইনে বলা ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১১ সদস্যের বেশি হবে না৷ এর মধ্যে একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং অনধিক ১০ জন উপদেষ্টা থাকবেন৷ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্য উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেবেন।

একজন উপদেষ্টার সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে;

তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো সংগঠনের সদস্য হবেন না; পরের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার লিখিত সম্মতি দেবেন এবং তার বয়স ৭২ বছরের বেশি হবে না।

সর্বশেষ অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি হবেন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। যদি সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে পাওয়া না যায় অথবা তিনি যদি দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে তার ঠিক আগে অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করা হবে।

যদি কোনো অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে পাওয়া না যায় অথবা তিনি যদি দায়িত্ব নিতে অসম্মতি জানান, তাহলে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের মধ্যে যিনি সর্বশেষে অবসরে গেছেন, তাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

আপিল বিভাগের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে না পাওয়া গেলে, বা তারা কেউ প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজি না হলে রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে কোনো ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেবেন। সেভাবেও যদি কাউকে না পাওয়া যায়, তাহলে রাষ্ট্রপতি তার স্বীয় দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বভার নেবেন৷

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় নির্বাচন অনেকটা গ্রহণযোগ্য হলেও ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়েই বাঁধে বিপত্তি।

সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সে সময়ের সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন।

পরে ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারি ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ নেয়। তবে এই সরকার ক্ষমতায় থাকে প্রায় দুই বছর।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২৬৩টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে।

২০১১ সালে এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই বছরের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নবম সংসদ।

সেই সংশোধনীর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও তার মিত্ররা। ২০১৮ সালে তারা ভোট এলেও সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ তোলে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকারে অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনও বর্জন করে বিরোধীরা।

টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের সপ্তম মাসে নজিরবিহীন এক অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পর আবারও একটি অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসে।

 

বিএনপি এবার যা চায়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিনেই রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।

“৯০ দিনের প্র্যাকটিস আছে, সেটা থাকুক। দ্বৈব দুর্বিপাকের কারণে যদি বিলম্ব করতে হয় আরও এক মাস রাখা যেতে পারে। কিন্তু ৯০ দিন রাখা যেতে পারে-এ বিষয়ে আমাদের মতামত দিয়েছি।”

তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান বহাল চাওয়া (অনুচ্ছেদ ৫৮) সেটা আমাদের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম। আদালতের রায় হয়ে গেছে ইতোমধ্যে…তার মানে আগের তত্ত্বাধায়ক ব্যবস্থা বহাল হল।

“কিন্তু একই বিষয়ে যহেতু আপিল বিভাগের একটা জাজমেন্ট রয়েছে, সেটা রিভিউয়ের মধ্যে রয়েছে, শুনানি হয়নি। আমরা আশা করি, সেটা জনগণের পক্ষে যাবে। যদি যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ত্রয়োদশ সংশোধনীতে যেভাবে ছিল সেভাবে বহাল হবে।”

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে এ বিএনপি নেতা বলেন, এখন আলোচনার বিষয় হল তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল হলে সেই জায়গায় কী কী সংশোধনী চায় দলগুলো।

“আমরা বলেছি, আমরা কিছু কিছু সংশোধনী চাই। শুধুমাত্র জুডিশিয়ারির হাতে এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রধান উপদেষ্টা বা অন্যান্য উপদেষ্টা হওয়াটা, ছেড়ে দেওয়াটা আমরা সঠিক মনে করছি না। প্রায় সকলে একমত।

“আগে যে প্রভিশনগুলো রাখার জন্য যে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো আমরা সবাই ঠিকমত এখনও উপস্থাপন করতে পারিনি, দলগুলো আলোচনা করে বিকল্প প্রস্তাব দেবে। পরে আলোচনা হবে।”

 

জামায়াত ইসলামীর পছন্দ বিচারবিভাগ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বিচারপতিকেই রাখতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “আমরা সকলে মিলে একমত হতে পেরেছি। কিন্তু ফরমেশন নিয়ে আমাদের মধ্যে ডিফারেন্স হচ্ছে। আমরা প্রধান বিচারপতির কথা বলেছি, উনাকে না পেলে বিচারপতি…

“কাউকে পাওয়া না গেলে ষষ্ট ধাপে রাষ্ট্রপতি একজন ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা করবেন (আগামী সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে। ১৯৯১ সালে যেভাবে শাহাবুদ্দিন সাহেবকে সিলেক্ট করেছিলাম।”

অনেকের প্রস্তাব ও কমিশনের প্রস্তাব ছিল, কাউকে না পেলে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া। জামায়াত এর বিরোধিতা করেছে।

“আমরা মনে করি প্রেসিডেন্টকে জড়ালে অতীতের অভিজ্ঞতা, সেরকম জটিলতা তৈরি হতে পারে।”

তাহের বলেন, তাদের দল পরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রূপরেখা দিতে পারে।

জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাস চেয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে করার দাবি রয়েছে দলটির।

তবে এ ব্যবস্থায় স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি আছে বিএনপির।

দলটির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, স্থানীয় সরকারের বিষয়টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানে লেখা নেই। কেউ সেরকম প্রস্তাব দিলে তা ‘অবাস্তব’ হবে।

“স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেয়ারকেটারের কর্ম হতে পারে-তা আমরা মনে করি না।” বলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।

 

 

এনসিপি কী চায়

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ‘রূপরেখা’ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় দলটির নেতারা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমেই এ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রশ্নের সমাধান করতে হবে।

এনসিপির রূপরেখায় বলা হয়েছে, সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ নিয়ে একটি ১১ সদস্যের সংসদীয় সর্বদলীয় কমিটি গঠন হবে। এই কমিটি সরকারি দল, বিরোধী দল ও অন্য সংসদ সদস্যদের তিনজন করে নাম প্রস্তাব করতে বলবে, যারা প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন।

প্রস্তাবিত মোট নয়জনের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। সর্বদলীয় কমিটির ১১ জন সদস্য এই নয়জনের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা বেছে নিতে ভোট দেবেন। আট/তিন ভোটে যিনি পাস করবেন তিনিই প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন।

এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করা সম্ভব না হলে আনুপাতিক ভোট পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হলে ‘র‍্যাংক চয়েজ’ ভোট পদ্ধতিতে সেই নয়জন প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেব বেছে নেওয়া যাবে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য জাবেদ রাসিম বলেন, “ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল, সেখানে বিচারালয়কে টেনে এনে বিচারালয়কে রাজনীতিকরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, আমরা এটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।”

 

 

 

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন কী বলেছিল

বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে একটি মামলা আপিল বিভাগে রিভিউয়ের পর্যায়ে রয়েছে। কমিশন আশা করে, আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরে আসবে।

এখন প্রশ্ন হল, কী পদ্ধতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসবে? এর সমাধানে বিষ্যতের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে চারটি সুপারিশ করে কমিশন।

>> তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ চার মাস নির্ধারিত করা এবং এর মেয়াদকালে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচন সম্পন্ন করা।

>> তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের পক্ষে সরকার পরিচালনায় রুটিন কার্যক্রমের বাইরেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি-বিধানের সংস্কার এবং প্রশাসনিক রদবদলের ক্ষমতা দেওয়ার বিধান করা।

>> স্থায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের নাম চূড়ান্ত করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানসহ অন্য ২০ জন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেওয়া।

>> সংবিধান সংশোধন কমিশন প্রদত্ত স্থায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশ গৃহীত না হলে, সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা এবং ক্ষমতাসীন দল তা বাস্তবায়ন করা।

 

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কী

অধ্যাপক আলী রীয়াজ নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলেছে–

>> কমিশন আইনসভার মেয়াদ শেষ হবার পরে কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত, একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সুপারিশ করছে।

>> এই সরকারের প্রধান 'প্রধান উপদেষ্টা' বলে অভিহিত হবেন। আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ (পনের) দিন পূর্বে অথবা আইনসভা ভেঙে গেলে, পরবর্তী অন্যূন ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সর্বোচ্চ ১৫ (পনের) সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে কার্য পরিচালনা করবেন।

>> অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ (নব্বই) দিন হবে, তবে যদি নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হয় তবে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শপথ গ্রহণমাত্র এই সরকারের মেয়াদের অবসান ঘটবে।

>> কমিশন সুপারিশ করেছে, পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতিতে আইনসভার সদস্য হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে।

গত ২ জুলাই দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, “দেশের সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিন্ন মত পোষণ করে এবং এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঐকমত্য আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও কাঠামো এবং এর এখতিয়ার নিয়েও আলোচনা হয়েছে আজ। এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কাছাকাছি এসেছে।