Image description

রাজধানী ঢাকায় বসবাস প্রায় আড়াই কোটি মানুষের। নগরবাসীর পরিচ্ছন্ন পরিবেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে জনবল সংকট। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনেই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। উত্তরের সিটি প্রশাসকের দাবি, মাত্র ২০ শতাংশ জনবল দিয়ে সামাল দিতে হচ্ছে পুরো কাজ।

দক্ষিণ সিটির প্রশাসক বলছেন, অন্তত এক হাজার অতিরিক্ত কর্মী প্রয়োজন। এদিকে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) প্রকল্পেও নেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি, ফলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা। 

বিগত বছরগুলোতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা ক্লিন ঢাকা গড়ার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবে পরিণত করতে পারেননি। বিশেষ করে গত দুই দশকে দুই সিটির চার মেয়র কিছু পরিকল্পনা নিলেও মাঠে তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন।

ফলে রাজধানীতে এখনো যত্রতত্র উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায় নানা ধরনের অভিযোগ।

জানা যায়, দুই সিটি করপোরেশন প্রতিদিন আট লাখ টন ময়লা সংগ্রহ করছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে উৎপাদন হয় তিন হাজার ৯০০ মেট্রিক টন বর্জ্য, আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন।

বিশাল এই বর্জ্য সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে সিটি করপোরেশন। সংস্থা দুটি বলছে, প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। অবশ্য বর্জ্য সংগ্রহে কর্মীদেরও অবহেলা চোখে পড়ার মতো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশাল, শহীদনগর, লালবাগ, বেড়িবাঁধ, আজিমপুর,  খিলগাঁও, বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে ময়লা পড়ে থাকে। আগারগাঁও, পল্লবী, মিরপুরসহ উত্তরের কিছু এলাকার আশপাশেও ময়লা-আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায়।

শহীদনগর ৩ নম্বর থেকে ৭ নম্বর গলির ভেতরে ১০ ফিটের রাস্তায় ময়লা পড়ে থাকায় হাঁটার মতো অবস্থাও নেই।  স্থানীয়দের দাবি, ময়লা সংগ্রহকারীর ভ্যানগুলো এখানে প্রতিদিন আসে না। এতে ময়লা জমে গেলে রাস্তায় ফেলে যান অনেকে। একই অবস্থা দয়াগঞ্জ, ইংলিশ রোড, পুরান ঢাকাসহ ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন স্থানে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক ক্লিন ঢাকা গড়তে রাস্তার পাশে মিনি ওয়েস্টবিন স্থাপনের পরিকল্পনা নেন। কিছু স্থাপন করলেও কিছুদিন পর তা উধাও হয়ে যায়। একই সঙ্গে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) স্থাপনেও উদ্যোগ নেন এ দুই মেয়র। কিছু এসটিএস নির্মাণও করেন। পরের মেয়াদে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম মেয়র হিসেবে ক্লিন সিটি করার ইশতেহারও দিয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২টি ওয়ার্ডে এসটিএস নির্মাণ করেছে। আর বাকি ২২টি ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণ করার মতো ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬৪টিতে এসটিএস নির্মাণ করেছে। বাকি ১১টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে উন্মুক্ত স্থান। সব মিলিয়ে দুই সিটির ৩৩ ওয়ার্ডে সেকেন্ডারি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।

ডিএসসিসি সূত্র বলছে, সংস্থাটিতে ১০ অঞ্চলে ৩৪৪ জন স্কেলভুক্ত এবং চার হাজার ৬০৬ জন দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। উত্তরে এই সংখ্যা আরো কম। মাত্র দুই হাজার ৫০৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ময়লা ব্যবস্থাপনায় কর্মীর সংকট রয়েছে। ২০ শতাংশ লোক দিয়ে আমাদের ১০০ শতাংশ কাজ করাতে হচ্ছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লোকবল সংকট তো রয়েছেই। নিয়োগের একটি উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু সিটি করপোরেশন বন্ধ থাকায় অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়া এখন চাইলেই নিয়োগ দেওয়া যায় না। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ দিতে হয়। ময়লা ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সেক্টরে আমরা পর্যালোচনা করব, কেমন সংকট রয়েছে। তারপর মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাব।’

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ কত দূর : রাজধানীর আমিনবাজারের ভাগাড়ের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের নভেম্বরে উত্তর সিটির তৎকালীন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। চুক্তিবদ্ধ চীনা প্রতিষ্ঠান এখন প্রকল্পের ভবন নির্মাণের পাইলিংয়ের কাজ করছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। ময়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘প্রকল্পের প্রস্তুতি শেষ। আমরা প্রস্তুত হয়ে বসে আছি, পরিবেশ অধিদপ্তর বললে আমরা কাজ শুরু করব।’