Image description
♦ সংশোধন হচ্ছে আইন ♦ হতে পারে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডও ♦ ক্যাম্পাসের জমি হতে হবে ৫ একর ♦ স্থায়ী সনদ না নিলে বন্ধ হবে বিশ্ববিদ্যালয় ♦ ভিসি হতে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ২০ বছরের

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন জারির পর। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র দুটি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০১০ সালে নতুন আইন জারি করা হয়। চলতি বছরে এসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৬টিতে। ১৫ বছর আগের জারিকৃত আইনে এত সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়মের মধ্যে পরিচালিত করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়মের লাগাম টানতে, সেগুলোকে আইনের মধ্যে পরিচালিত করতে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন। সংশোধিত আইনের ধারা লঙ্ঘনে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিদ্যমান আইনে এই অর্থদণ্ড ছিল ১০ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে এ দণ্ড ৪০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া সংশোধিত আইনে ভিসি হতে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ২০ বছরের। বর্তমান আইনে ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী সনদ না নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সংশোধিত আইনে স্থায়ী সনদ না নিলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও আইন সংশোধনের খসড়া সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্যমতে, বর্তমানে বিদ্যমান আইনে প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা, অন্য মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ৩ কোটিসহ অন্য এলাকার জন্য দেড় কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখার শর্ত রয়েছে। কিন্তু সংশোধিত আইনে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ৮ কোটি, অন্য মেট্রোপলিটনের জন্য ৫ কোটি ও অন্য এলাকার জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখার কথা বলা হয়েছে। আইনের অধীনে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সাময়িক অনুমতির (সাত বছর) মেয়াদের মধ্যে সনদ গ্রহণ করতে হবে। এ মেয়াদের মধ্যে সনদের জন্য আবেদন করতে ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রমসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে সংশোধিত আইনে। বিদ্যমান আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ১ একর ও অন্য এলাকার ক্ষেত্রে ২ একর জমি থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। সংশোধিত আইনে যে কোনো এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপনের ক্ষেত্রে ৫ একর নিষ্কণ্টক জমি থাকার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য কমিটির পাশাপাশি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে।

উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি ডিগ্রির পাশাপাশি ১০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজে ২০ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত রয়েছে। কিন্তু সংশোধিত আইনে ভিসি নিয়োগের জন্য ২০ বছর স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরে তৃতীয় শ্রেণিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ভিসি পদের যোগ্য না হওয়ার ধারাও সংযোজন করা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকতে পারবেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতায় পরিবর্তন আনা হয়েছে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে নিয়োগের জন্যও। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা ভিসি নিয়োগে সরকারের দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ আনেন বরাবরই। সংশোধিত আইনে ভিসি পদ শূন্য হওয়ার চার মাস আগে যোগ্য তিন শিক্ষাবিদের প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ব্যত্যয়ে শাস্তির মাত্রাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইনের ২০টি ধারা উল্লেখ করে সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এসব বিধান লঙ্ঘন করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংশোধনী আনার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। দফায় দফায় যাচাইবাছাই আর পর্যালোচনা শেষে অনেকটা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এই সংশোধনীর। আশা করছি শিগগিরই এ সংশোধন আইন উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।