Image description
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর একের পর এক ভারতীয় নিষেধাজ্ঞা নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা রপ্তানি আয় হ্রাস, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ এবং সীমান্তে চোরাচালান বৃদ্ধি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি গোপন প্রতিবেদন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে অনুরোধ করা হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে।

চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ভারত বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে রপ্তানির জন্য ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করে। এর জবাবে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর ১৭ মে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ কিছু পণ্যের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সর্বশেষ, ৩০ জুন ভারত আবারও স্থলপথে বাংলাদেশের ৯টি পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করে। বর্তমানে শুধু ভারতের নাভাসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে এসব পণ্য প্রবেশের অনুমতি আছে।

বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ছোট ও মাঝারি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে যারা লুঙ্গি ও অন্যান্য পোশাক তৈরি করে, যেগুলোর বেশির ভাগ কারিগরই নারী। একজন রপ্তানিকারক জানান, স্থলবন্দর ব্যবহার করে এক থেকে ছয় দিনের মধ্যে ভারতীয় বাজারে পণ্য পৌঁছানো যেত। এখন সমুদ্রপথে তা পৌঁছাতে ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগবে, ফলে খরচও দ্বিগুণ বা তিন গুণ বেড়ে যাবে।

এ ছাড়াও কৃষিপণ্য ও খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকবে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন মতে, বৈধ পথে রপ্তানির সময় ও খরচ বাড়লে সীমান্তে চোরাচালান এবং অবৈধ বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এ কারণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল জোরদারের সুপারিশও করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকের জন্য ভারতের কাছে তারিখ নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারতের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে ভারত সম্প্রতি দাবি করেছে, বাংলাদেশে তাদের রপ্তানিপণ্য বিভিন্ন অশুল্ক বাধার (নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার) মুখে পড়ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি, মান যাচাই সনদ, সীমিত অবকাঠামো ও সংযোগ ব্যবস্থার সমস্যা।