Image description
 

যেসব জেলায় ইলিশ মাছ ধরা হয়, সেখানে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। সরকার যখন এমন পরিকল্পনা করছে ঠিক সেসময় ঢাকার বাজারে ইলিশের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। বাজারে হাতেগোনা কিছু দোকানে মিলছে ইলিশ, তবে দাম বেশ চড়া। উচ্চমূল্যের কারণে ক্রেতার নাগাল ছাড়া হয়ে গেছে জাতীয় মাছ ইলিশ।

শনিবার (৫ জুলাই) বেলা ১১টায় রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আগে অন্তত চারটি মাছের দোকানে ইলিশ বিক্রি হলেও এখন মিলছে মাত্র একটি দোকানে। সেখানে এক কেজি সাইজের প্রতিটি ইলিশের দাম চাওয়া হয় ২ হাজার ৮০০ টাকা। আর ৬০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি ২ হাজার টাকা হাঁকছেন বিক্রেতা।

বিক্রেতা নুর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকালে আড়তে মাছ পাইনি। ঘাট থেকে এসব মাছ কিনে আনা হয়েছে একটু আগেই।’

হাত দিয়ে দেখিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, ‘ওইদিকে একটা দোকানেও ইলিশ নেই। সকালে সবাই আড়ত থেকে ফিরে এসেছে, অনেকে অন্য মাছ বিক্রি করছে।’

রামপুরা বাজারের কাছাকাছি উলুন বাজার। সেখানেও একটি দোকানেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি ইলিশের দাম প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি।’

মনির হোসেন এক কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার ২০০ টাকা দাম চান। অর্থাৎ তার প্রতিটি ইলিশের দাম দাঁড়াচ্ছে চার হাজার টাকার কাছাকাছি।

 

একজন ক্রেতা সেখানে ইলিশ ওজন করিয়ে না কিনে ফিরে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এটা (ইলিশ) আমাদের কেনার ক্ষমতার বাহিরে। মাঝেমধ্যে পরিবারের আবদারে কিনতে হয়, আর এখন কিছু আত্মীয় ছিল, সেজন্য কিনতে চাইলাম। কিন্তু দাম এত বেশি হলে কেনা সম্ভব কীভাবে?’

এদিকে ইলিশের দাম সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে উৎস স্থানে দাম বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে এরপর ঢাকার বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়েছে।

অন্যদিকে ইলিশের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার খবরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। ইলিশের মূল্য নির্ধারণ হলে বিক্রি বন্ধের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতারা বলছেন, বিষয়টি একেবারে অযৌক্তিক। ইলিশের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করা একেবারে অসম্ভব। যার কারণে সরকারের এ সিদ্ধান্ত কখনোই বাস্তবায়ন হবে।

এদিকে ঢাকার আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ চাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা ও ৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে আগাই হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা আরও বলছেন, ইলিশের মৌসুম এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। এর মধ্যে যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ। মূল্যবৃদ্ধি শুধু সাম্প্রতিক প্রবণতা নয়, অনেক দিন ধরেই ইলিশের দাম চড়া।

 

দেশে সারাবছরই ইলিশ ধরা পড়ে। তবে বেশি ধরা পড়ে বর্ষার শেষে। ইলিশ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, মে ও জুন মাস থেকে একটু বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি। তবে জুলাইয়ের প্রথম ভাগে ইলিশের এত বেশি দাম কোনোভাবেই যৌক্তিক না।